কোন নবীর পেশা কি ছিল : দিনমজুর ও শ্রমিকদের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হওয়া উচিৎ
কোন নবীর পেশা কি ছিল : দিনমজুর ও শ্রমিকদের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হওয়া উচিৎ
আসসালামু আলাইকুম!
প্রিয় পাঠক! আশা করি সবাই ভালো আছেন। আজ আমরা জানব ইসলামের নবীগণ কে কোন কাজ করে জীবীকা অর্জন করতেন। এখানে সব নবীদের পেশা দেয়া সম্ভব হয়নি। কারণ সবার পেশা জানা সম্ভব নয়। প্রসিদ্ধ কিছু নবী রাসুলদের পেশা উল্লেখ করা হয়েছে। তারা কে কি কাজ করে নিজেদের জীবীকা নির্বাহ করতেন। তাহলে চলুন জেনে নেই নবীগণের পেশা কি ছিল।
নবী রাসূলগনের জীবনের দিকে যদি আমরা তাকাই তাহলে দেখতে পাই, তাঁদের অধিকাংশ পার্থিব এই জগতের তথাকথিত অভিজাত পেশাজীবী ছিলেন না। তারা সাধারণত কৃষিকাজ, ব্যবসা, চাষ বাস করা, কাপড় তৈরি, সুতা তৈরি, দর্জি, বা কেউ কেউ শাসকও ছিলেন।নিচে আমরা সকল নবী রাসূলগনের পেশার একটি তালিকা তৈরি করেছি দেখুন।
হযরত আদম আঃ এর পেশা কি ছিল?
হযরত বাবা আদম (আঃ) পেশায় ছিলেন কৃষক। তিনি চাষ-বাস করতেন। এভাবেই তিনি জীবন যাপন করেছেন। মূলত কৃষিকাজ কর্ম ছিল তার প্রধান পেশা।
হযরত শীস আঃ কি কাজ করে জীবীকা নির্বাহ করতেন
হযরত শীস (আঃ) পেশায় ছিলেন একজন তাঁতী। তুলো, রেশমগুটি থেকে সুতো কেটে কাপড় বানাতেন। তবে তিনি চাষবাস করতেন বলেও জানা যায়। অর্থাৎ মূল পেশায় ছিলেন তাতী আর পাশাপাশি তিনি অন্যান্য কাজও করতেন যেমন আমাদের সমাজের শ্রমজীবী মানুষ করে থাকে।
হযরত ইদ্রিস আঃ পেশায় কি ছিলেন
জানা যায় হযরত ইদ্রীস (আঃ) পেশায় একজন দর্জি। আরো জানা যায় ইতিহাসে তিনি প্রথম সুঁইয়ের আবিষ্কার ও ব্যবহার করেন। শীস আঃ তুলো ও রেশম থেকে সুতা তৈরি করে কাপড় বানাতে জানতেন। আর ইদ্রিস আঃ সেই কাপড় সেলাই করে জামায় রূপান্তর করতেন।
হযরত নূহ আঃ কি কাজ করে জীবীকার নির্বাহ করতেন
হযরত নূহ (আ) জীবিকার নির্বাহ করার দিক থেকে ছিলেন একজন কাঠমিস্ত্রি । অর্থাৎ তিনি কাঠ কেঠে কাঠ দিয়ে বিভিন্ন জিনিস তৈরি করে জীবীকা নির্বাহ করতেন। আপনারা জানেন তাঁকে আল্লাহ তায়ালা কাঠ দিয়ে বড় নৌকা তৈরির আদেশ দিয়েছিলেন।
হযরত হুদ আঃ কি কাজ করে জীবন যাপন করতেন
হযরত হুদ (আ) মূলত ব্যবসার সূচনা করেন। তিনি পশুপালনও করতেন। আধুনিক যুগের অনেকটা মুদি দোকানের মত প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির ব্যবসা করতেন। তিনি এসব জিনিস বিক্রি করে তথা ব্যবসা করে জীবন যাপন করেছেন।
হযরত সালেহ আঃ এর পেশা কি ছিল
হযরত সালেহ (আ) পেশায় ছিলেন একজন গোয়ালা। তিনি উটের পালন করতেন। আর সেই উটের দুধ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। অর্থাৎ হযরত সালেহ আঃ ছিলেন একজন গোয়ালা ছিলেন।
- হযরত লূত আঃ কি কাজ করে জীবন যাপন করেছেন
হযরত লুত (আ) পেশায় ছিলেন একজন চাষী। তাঁর সম্প্রদায়ের মত তিনি কৃষিকাজ করতেন। আমরা ইতিহাস থেকে তাঁর অনেক পাণ্ডিত্য সম্পর্কে জানতে পারি।
হযরত ইব্রাহীম আঃ পেশায় কি ছিলেন
বিভিন্ন গ্রন্থ থেকে জানা যায় হযরত ইব্রাহিম (আঃ) পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি তথা নির্মান কাজ করতেন। তবে তিনি কৃষিকাজ ও পশুপালনও করেছেন এমনটাও জানা যায়। তবে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে তিনি রাজমিস্ত্রী ছিলেন। তিনি আল্লাহ তায়ালার আদেশে পবিত্র কাবা ঘর তৈরি করেন।
হযরত ইসমাইল আঃ কি কাজ করে জীবীকা নির্বাহ করতেন
আমরা জানি হযরত ইসমাইল (আ) তাঁর পিতা ইব্রাহিমের মত একই পেশা গ্রহণ করেছিলেন। তার সাথে তিনি শিকারও করতেন।আবার ভাষার দিক থেকে অনেক পাণ্ডিত্য অর্জন করেছিলেন অর্থাৎ তিনি বহুভাষী ছিলেন।
হযরত ইসহাক আঃ কি পেশায় নিয়োজিত ছিলেন
হযরত ইসহাক (আ) পেশাগতভাবে ছিলেন একজন মেষপালক ও রাখাল। তিনি মেষপালন ও অন্যান্য পশুপালন করতেন। তা থেকে অর্জিত টাকা আয় হলে সেই অর্থ দিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবন যাপন করেছেন।
হযরত ইয়াকুব আঃ কি কাজ করে জীবীকা নির্বাহ করতেন
ইতিহাস থেকে আমরা জানতে পারি হযরত ইয়াকুব (আ) ছিলেন একজন রাখাল। তিনি পশু পালন করে জীবীকা অর্জন করতেন। অর্থাৎ তাঁর পেশা ছিল রাখালের কাজ করা। এছাড়াও তিনি কৃষিকাজ ও অন্যান্য স্বাভাবিক কাজ করে জীবন যাপন করেছেন।
হযরত ইউসুফ আঃ এর পেশা কি ছিল?
অন্যান্য নবী রাসূলগনের পেশা সম্পর্কে আমরা না জানলেও হযরত ইউসুফ (আ) এর জীবনী পেশা সম্পর্কে আমরা জানি। কারন আমরা অনেকেই দীপ্ত টিভির ইউসুফ জুলেখা দেখেছি। তিনি মূলত সরকারি কাজ কর্মে নিয়োজিত ছিলেন।আর তিনি ছিলেন কৃষি দফতরের প্রতিষ্ঠাতা ও ঘড়ির আবিষ্কারক। এই ক্ষেত্রে তিনিও পরোক্ষভাবে কৃষিকাজ করেছেন। কৃষি বিষয়ক অনেক কাজ তাঁর থেকে সাধারণ মানুষ জানিতে পেরেছে।
হযরত আইউব আঃ কি কাজ করতেন
আমরা জানি হযরত আইয়ুব (আ) ও একজন ছিলেন কৃষক।তিনি কৃষি কাজ করে জীবীকা নির্বাহ করতেন।
হযরত শোয়াইব আঃ এর পেশা কি ছিল
হযরত শুয়াইব (আ)ও ছিলেন কৃষক। তিনি জীবীকা নির্বাহ করার জন্য কৃষিকাজ করেছেন। এভাবে দিকে খা যাচ্ছে প্রায় সব নবী রাসূলগনের পেশা ছিক কৃষি ও ব্যবসা।
হযরত মূসা আঃ কি কাজ করে জীবীকা নির্বাহ করতেন
ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখতে পাই হযরত মুসা (আ) : ছিলেন রাখাল, কিছু কাল অন্যের কর্মচারী হিসেবেঅ নিয়োজিত ছিলেন। তবে তিনি জীবনের অধিকাংশ সময়ই কৃষিকাজের সাথে নিয়োজিত ছিলেন।
হযরত হারুন আঃ এর পেশা কি ছিল
হযরত হারুন (আ) পেশায় ছিলেন একজন আমলা। অর্থাৎ তিনি রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা ছিলেন। জনগণের সাথে ছিল তাঁর সুন্দর সম্পর্ক। আপনারা ইতিহাস পড়লে আরো জানতে পারবেন।
হযরত দাউদ আঃ কি কাজ করতেন
হযরত দাঊদ (আ) জীবিকা নির্বাহ করেছেন কামারের কাজ করে। অর্থাৎ তিনি একজন কামার ছিলেন। লোহা বা মেটালের বিভিন্ন জিনিস তৈরি করে জীবীকা নির্বাহ করতেন।
হযরত সোলাইমান আঃ পেশায় কি ছিলেন
হযরত সুলাইমান (আ) পেশায় মূলত শাসক ছিলেন। আমরা য
জানি সোলাইমান আঃ অর্ধ পৃথিবী শাসন করেছেন। অনেক পশু পাখি জীব যন্তু তার ভাষা বুঝত। জীন জাতি তার সিংহাসন বহন করত। আরো অনেক রহস্যময় ঘটনা তাঁর জীবনের সাথে জড়িত ছিল।
হযরত যুল-ফিকল আঃ কি কাজ করে পরিবার চালাতেন
আমরা জানতে পারি হযরত যুল-কিফল (আ) পেশায় একজন বেকারি কর্মী ছিলেন। তার মানে তিনি রুটি বানাতেন এবং এই রুটি বানানোর কাজ করেই তিনি জীবীকা নির্বাহ করতেন।
হযরত ইলিয়াস আঃ কি কাজ করে জীবন যাপন করতেন
জানা যায় হযরত ইলিয়াস (আ) পেশায় একজন তাঁতী ছিলেন, তিনি দর্জি আর কৃষিকাজ করে জীবীকা নির্বাহ করতেন। তাহলে দেখা যাচ্ছে অধিকাংশ নবী রাসূলগন খেটে খাওয়া মানুষের মত কাজ করে জীবীকা নির্বাহ করতেন।
হযরত ইউনুস আঃ এর পেশা কি ছিল
হযরত ইউনুস (আ) তাঁর বাবার মতই একজন জেলে ছিলেন। তিনি মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। মাছ ধরে মাছ বিক্রি করতেন বা বিনিময়ে অন্য খাদ্য বা পণ্য সংগ্রহ করতেন।
হযরত উযাইর আঃ কি কাজ করে জীবীকা নির্বাহ করতেন
হযরত উযাইর (আ) মূলত পেশাগত জীবনে একজন মালি ছিলেন। তবে সাথে সাথে কৃষিকাজও করতেন। ইহুদি সম্প্রদায়ের নবী ছিলেন তিনি। তাঁকে ইহুদিগণ আল্লাহর পুত্র মনে করে। সে অনেক কথা। এখানে মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে কোন নবি কি পেশা নিয়ে পৃথিবীতে জীবন যাপন করেছেন সেটা। তাই অন্য বিষয় বাদ দেয়া হচ্ছে।
হযরত জাকারিয়া আঃ কি কাজ করতেন
হযরত যাকারিয়া (আ) ছিলেন একজন কাঠমিস্ত্রি। কাঠের মাধ্যমে বিভিন্ন দৃষ্টিনন্দন জিনিস তৈরি করতেন। তা বিক্রি করে আয় করতেন। আর তা দিয়ে জীবন যাপন করতেন।
হযরত ইয়াহইয়াহ আঃ কি কাজ করতেন
আমরা জানি হযরত ইয়াহিয়া (আ) পেশাগত দিক থেকে শিকার এর কাজ ও ফলমূলাদি সংগ্রহের কাজ করতেন। এর মাধ্যমে তিনি যা আয় করতেন তা নিয়েই পরিবার ও সংসার পরিচালনা করতেন।
হযরত ঈসা আঃ এর পেশা কি ছিল
হযরত ঈসা (আ) জীবিকা নির্বাহ করার জন্য শিকারী পেশাকে বেছে নিয়েছিলেন। তিনি শিকার করে তা থেকে যা আয় হত তা দিয়ে জীবন যাপন করতেন আর মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকতেন। তাঁকে আল্লাহ তায়ালা আকাশে তুলে নিয়েছেন। আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উম্মত হিসেবে তিনি পৃথিবীতে আবার আসবেন।
এবার বলব বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পেশা নিয়ে। তিনি কি পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। আমরা মোটামুটি সবাই জানি তিনি কি পেশায় ছিলেন। তার পরেও বলছি।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) পেশায় ছিলেন ব্যবসায়ী ও রাখাল। হযরত খাদিজাতুল কুবরা রাঃ এর ব্যবসার কাজে তিনি নিযুক্ত ছিলেন। অর্থাৎ তিনি অন্যের ব্যবসায় কর্মচারী হিসেবেও কর্মরত ছিলেন।
- দিন মজুর শ্রমিকদের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হওয়া উচিৎ
উপরের এত সব নবী রাসূলগনের পেশার জানার পর আপনার কি মনে হয় তারা কি সাধারণ মানুষের মত জীবন যাপন করেন নি? তারা কি তাহলে সাধারণ মানুষের পক্ষে ছিলেন নাকি বিপক্ষে ছিলেন। আল্লাহ তায়ালা কি পারতেন না সব নবীদের অঢেল সম্পত্তির মালিক বানিয়ে দিতে?
অবশ্যই পারতেন কিন্তু কেন দিলেন না। কেনই বা নবী রাসূলগনের পেশা সাদা মাটা ছিল। কারণ আল্লাহ তায়ালা বিশ্ববাসীর কাছে প্রমাণ রেখেছেন যে কীভাবে সাধারণ পেশায় কাজ করেও আল্লাহকে মনে রাখা যায়।
আরো একটি কারণ ছিলা আল্লাহ তায়ালার নিবীরা যেন সমাজের বঞ্চিত অবহেলিত ও অনগ্রসর মানুষের খুব কাছে যেতে পারেন। তাদের অধিকার যেন খুব ভালোভাবে জানতে পারেন। তাদের প্রতি ভালোবাসা ও মায়া থাকে। তারা যে যেকোনো রাষ্ট্রের চালিকা শক্তি তা যেন বুঝতে পারেন।
তাহলে আমাদের সাধারণ মানুষের প্রতি কেমন আচরণ করা উচিৎ। এই শিক্ষা নবী রাসূলগনের জীবনী থেকে নেয়া উচিৎ। সমাজের প্রতিটি পেশাকে সমানভাবে সম্মানের চোখে দেখা উচিৎ। যে কোনো পেশায় যদি ঘাটতি দেখা দেয় তবে এর ফলাফল সকল মানবের উপর পড়বে।
তাই আসুন ভেদাভেদ ভুলে শ্রমজীবী মানুষের অধিকার তাদের বুঝিয়ে দেই। তাদের খোঁজ খবর নেই। তাদের দুর্দশায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেই।
মনে রাখবেন তারা না বাঁচলে আপনি-ও বাঁচতে পারবেন না। আপনি যত ধনী হন না কেন, আপনি নিজে স্বয়ং সম্পূর্ণ নন। আপনি সমাজের খেটে খাওয়া মানুষের উপরে নির্বরশীল। তাই মহামারী, দূর্যোগের সময় তাদেরকে দু'বেলা দুমুঠো ভাত রুটি খেয়ে বাঁচতে তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসুন।
কোন মন্তব্য নেই