সালাতুত তাসবীহ, সূর্যগ্রহণ, চন্দ্রগ্রহণ ও ইশরাকের নামায

সালাতুত তাসবীহ, সূর্যগ্রহণ, চন্দ্রগ্রহণ ও ইশরাকের নামায পড়ার নিয়ম


নামাজের সময়। নামায পড়ার নিয়ম






কুরআনের ছোট সুরা শিখুন শুদ্ধ করে। সুরা ফিল




আগে আমরা জানব সালাতুত তাসবীহ নামাযের ফায়দা ও গুরুত্ব। কেননা আমরা যদি উপকারিতা না জানি তবে আগ্রহ জাগবেনা। মানুষ সর্বদা লাভের পাগল। যেখানে লাভ আছে সেখানেই মানুষ।  এই টা ই দুনিয়ার নীতি।


সালাতুত তাসবীহ এর ফায়দা



সালাতুত তাসবীহ নামাযের রয়েছে অনেক ফায়দা। কেননা রাসুল সাঃ বলেছিলেন তাঁর চাচাকে যদি প্রতিদিন সম্ভব হয় তাহলে সালাতুত তাসবিহ প্রতিদিন পড়ার জন্য। না পারলে সপ্তাহে একবার, তা নাহলে মাসে একবার। এটাও সম্ভব না হলে বছরে একবার, এটাও সম্ভব না হলে জীবনে একবার হলেও যেন সালাতুত তাসবীহ নামায আদায় করেন।



তাহলে এই ঘটনা দ্বারা বুঝা যায় সালাতুত তাসবীহ এর ফায়দা অনেক বেশি। সালাতুত তাসবীহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  তাই আমাদের উচিৎ এই নামায মাঝে মাঝে হলেও পড়া। কেননা এর দ্বার সমস্ত সগীরা গুনাহ আল্লাহ মাফ করে দেন।


সালাতুত তাসবীহ পড়ার নিয়ম ও পদ্ধতি



 প্রথম রাক"আতে সূরা ফাতেহা পড়ার পূর্বে পনের বার নিচের দুয়াটি পড়তে হবে।

سبحانَ اللّهِ وَالحمد الله ولا إله إلا الله والله أكبر .

বাংলা উচ্চারণঃ- সুবহানাল্লাহি ওয়ালহামদু লিল্লাহি ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।

অর্থ, সকল পবিত্রতা ও প্রসংশা একমাত্র আল্লাহর জন্য। আল্লাহ ব্যতীত কোনো মা'বুদ বা উপাস্য নেই। তিনি সবচেয়ে মহান।


অতঃপর সূরা ফাতেহা পাঠ করিয়া সাথে অন্য একটি সূরা পড়ে পুনরায় উপরােক্ত দুয়াটি পড়তে হবে দশ বার।তারপর তাকবীর বলে রুকুতে যেতে হবে। রুকুতে যাওয়ার পর রুকূর তাসবীহ পাঠ করে আবার উক্ত দুয়া দশ বার পড়তে হবে ।


 তাতপর "সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ " বলে দাঁড়াতে হবে এবং " রাব্বানা লাকাল হামদ " বলে পুনরায় উক্ত দুয়াটি দশ বার পড়তে হবে ।

পরে তাকবীর বলে সিজদায় যেতে হবে । সিজদায় গিয়ে প্রথমে সিজদার তাসবীহ্ শেষ করে উপরােক্ত দুয়া আবার দশবার পড়তে হবে ।

তারপর তাকবীর বলে বসতে হবে এবং আবার দশ বার বর্ণিত দুয়াটি পড়তে হবে । আবার সিজদায় গিয়ে সিজদার তসবীহ শেষে দশ বার দুয়া পড়তে হবে ।


তারপর দ্বিতীয় রাক'আতে দাঁড়িয়ে প্রথম রাক'আতের মতো সূরা ফাতেহার পূর্বে পনের বার ঐ দুয়াটি পড়তে হবে । পরে প্রথম রাক'আতের মতোই নামায আদায় করতে হবে ।



তারপর "আত্তাহিয়্যাতু" পড়ে প্রথম ও দ্বিতীয় রাক'আতের ন্যায় তৃতীয় ও চতুর্থ রাক"আত শেষ করে সালাম ফিরাতে হবে ।




ইশরাকের নামায পড়ার সময় ও নিয়ম।


ইশরাকের নামাজ কাকে বলে?


 ইশরাক নামায হচ্ছে ফজরের ওয়াক্ত শেষ হয়ে যখন সূর্যোদয় হয় , তখম যে দুই বা চার রাক'আত নামায় আদায় করা হয় তাকেই ইশরাকের নামায বলা হয়।


এশরাকের নামায কি সুন্নাত নাকি নফল?



ইশরাকের নামায সুন্নতে গায়রে মুয়াক্কাদা। অর্থাৎ এর জন্য তাগাদা নেই সত্য,  কিন্তু নিয়মিত এ নামায আদায় করলে অনেক সওয়াব অর্জন করা যায়।



কোন আমল করলে হজ্ব ও ওমরার সওয়াব হয়?



কোন কোন কিতাবে বর্ণিত হয়েছে , এ নামায চার রাকআত পাঠ করলে একটি কবুল হজ্জ ও একটি ওমরার সওয়াব পাওয়া যায় । নিয়মিত যে ব্যক্তি এ নামায আদায় করেন আল্লাহ তা"আলা তাঁর প্রতি খুশি হন এবং মৃত্যুর পর তিনি অনেক পুরস্কারে পুরস্কৃত হবেন ।


ইশরাকের নামায পড়ার সময়



ফজরের নামায আদায় করার পর সূর্যোদয় পর্যন্ত জায়নামাযের উপর বসে নিবিষ্ট মনে তাসবীহ ও দোআ দরূদ পাঠ করে অপেক্ষা করতে হবে । পরে সূর্যোদিত হয়ে যখন রক্তবর্ণ কেটে উজ্জ্বল আলো ধারণ করবে , তখনই ইশরাকের নামাযের ওয়াক্ত পড়তে হয় । সূর্যোদয়কাল হতে দুই দণ্ড পর্যন্ত ইশরাক নামাযের সময় থাকে।




সূর্য গ্রহণের নামায বা কুসূফ নামায


সূর্যগ্রহনের সময় যে নামায পড়া হয় তাকে কুসূফ নামায বলা হয়। সূর্য গ্রহণ হলে এই সময় আতংকিত না হয়ে আল্লাহর কাছে নামায পড়ে দুয়া করতে হয়। আমরা আগে জানব সূর্যগ্রহনের ফলে জীব জগতে এর প্রভাব কি হয়।


সূর্য গ্রহণের ফলে পৃথিবীতে এর প্রভাব কি হয়?



আরবী ভাষায় সূর্য গ্রহণকে কুসুফ ' বলা হয় ।এটা একটা প্রাকৃতিক ব্যাপার। আকাশ , চন্দ্র , সূর্য , নক্ষত্র , গ্রহ , উপগ্রহ প্রভৃতি আমাদের অত্যন্ত পরিচিত । অথচ এগুলাে সম্বন্ধে আমাদের জ্ঞান এতই সীমাবদ্ধ যে , ফলে আমরা অনেক সময় এগুলাে সম্বন্ধে যদিও পূর্বাহ্ণ কিছু জানতে পারি , কিন্তু তার সম্যক রহস্য তাৎপর্য অনুধাবনে আমরা অক্ষম । কেননা এসবের অনেক কিছুই মানবীয় জ্ঞান বুদ্ধির আওতাধীন নয় ।



কিন্তু প্রাকৃতিক নিয়মে সংঘটিত এসব ঘটনা সম্বন্ধে যদিও আমরা বেশী কিছু বলতে চাই না , তবুও পৃথিবীর যাবতীয় প্রাণীর উপরই তার প্রতিক্রিয়া অল্প বিস্তর হয়ে থাকে । মাটির মানুষ মাটির পৃথিবীর নিয়মে আবদ্ধ ।


একান্তভাবে সৌরমণ্ডলের অধীন।  ঝড় - বৃষ্টি , শীত - গ্রীষ্ম এসব প্রাকৃতিক পরিবর্তনের যেমন একটা প্রতিক্রিয়া প্রাণীজগতে দেখা দেয় , অনুরূপ চন্দ্র - সূর্য গ্রহণেও আবহাওয়া সংক্রান্ত একটা পরিবর্তন আসে । মানুষের দেহ,মনের উপরও এ পরিবতনের একটা প্রভাব পড়ে  কিন্তু এ পরিবর্তনের পরিণাম কি , তা আমরা জানি না।তাই আল্লাহ তায়ালার অন্যান্য দানের ন্যায় এটাও সহজভাবে গ্রহণ করে এ সময় আমাদের তার নাম স্মরণ করাই দায়িত্ব।


 যখনই পৃথিবীতে কোন অদৃষ্টপূর্ব ঘটনা ঘটে , তখনই আল্লাহর যিকির ও ইবাদতে নিয়ােজিত হওয়া দাসত্বের পরিচায়ক । অতএব , প্রকৃতির এ উল্লেখ্যযােগ্য পরিবর্তনে আমাদের আল্লাহ তায়ালার কুদরত স্মরণ করে নামায আদায় করা কর্তব্য ।



আরো পড়ুন.........

 কোন সূরা  আমল করলে চেহারা সুন্দর হয় সন্তান বাবা মায়ের কথা শুনে?




সূর্য গ্রহণ হলে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি করতে বলেছেন?



সূর্যগ্রহণকালে বিশেষ নিয়মে নফল নামায আদায় করতে রাসূলুল্লাহ ( সাঃ ) - এর হাদীসে উৎসাহিত করা হয়েছে । এ নামাযকে কুসুফের নামায বলা হয় । আলেমগণের মতে এ উপলক্ষে দুই রাকআত নামায আদায় করা উচিৎ। এ নামায সুন্নতে গায়রে মুআক্কাদা। উক্ত দুই ' রাক"আত নামায জামাতেও পড়া যায় । তবে আযান বা একামত দিতে হয় না । এ নামাযে কেরাত লম্বা বা উচ্চ আওয়াজে পাঠ করা নিয়ম নেই। আর স্ত্রীলােকেরা গৃহে বসে এ নামায আদায় করে নিবে।


চন্দ্রগ্রহণের সময় কি করা উচিৎ


চন্দ্রগ্রহণের সময়ও সূর্য গ্রহণের সময়ের ন্যায় আল্লাহর স্বরণে নিজেকে নিয়োজিত রাখা উচিত।

খুসূফ নামায চন্দ্রগ্রহণকে বলা হয় খুসূফ । একই উদ্দেশে এবং একই নিয়মে কুসূফের নামাযের মত এ নামাযও আদায় করতে হয় । কুসূফ এবং খুসূফের নামায আদায়কারীর মনে আল্লাহ তাআলার মহিমা সম্বন্ধে উচ্চ ধারণা নিজের দুর্বলতা জ্ঞাপন করে সাহায্য প্রার্থনা ও আত্মসমর্পণ করার ভাব উপস্থিত থাকা কর্তব্য ।


চন্দ্রগ্রহণের নামায কীভাবে পড়তে হয়


এ নামাযের নিয়ত কুসূফের নামাযের মতোই ।শুধু নিয়তে কুসূফের জায়গায় খুসূফ বলতে হয় । তাই উপরে উল্লখিত কুসূফের বা সূর্য গ্রহণের নামায পড়ার নিয়মটি দেখে নিন।



পাঠকের কাছে মতামত জানতে চাচ্ছি। যদি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে কমেন্ট করে উতসাহ দিবেন। পোস্টটি শেয়ার করে অন্যকে দেখার সুযোগ করে দিবেন। এগুলো সব অনুরোধ।


কোন মন্তব্য নেই

enot-poloskun থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.