অজু, গোসল, তায়াম্মুমের ফরজ, সুন্নাত, ও নিয়ম
ইবাদতের জন্য পবিত্রতা অর্জন করার নিয়ম ও পদ্ধতি
আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় kassBD বাসী। আশা করি সবাই ভালো আছেন। আজ আমরা জানব অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এই জানা ইহকাল ও পরকালের কল্যাণের জন্য কাজে আসবে। তা হচ্ছে কীভাবে ইবাদতের জন্য পবিত্রতা অর্জন করবেন। এখানে আমরা আলোচনা করব অজু, গোসল, তায়াম্মুমের ফরজ, সুন্নাত, মুস্তহাব ও এগুলো করার নিয়ম ও পদ্ধতি। আশা করি সকলে উপকৃত হবেন। চলুন তাহলে শুরু করি।
পবিত্রতা অর্জন করা নামাজের পূর্ব শর্ত । নামাজি ব্যক্তির শরীর, পোশাকাদি নামাজের স্থান নাপাক থেকে পবিত্র রাখা ফরজ। এই নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হলাে :-
ইস্তেঞ্জার বিবরণ
পেশাব পায়খানার অপবিত্রতা থেকে পবিত্রতা অর্জন করাকে ইস্তিঞ্জা বলে। পেশাব পায়খানার পর ঢিলা বা কুলুখ ব্যবহার করা ওয়াজীব তারপর পানি দ্বারা ধৌত করা মুস্তাহাব । ঢিলা বা কুলুখ তিনটি ব্যবহার করা সুন্নাত । তবে একটির তিন প্রান্ত তিনবার ব্যবহার করলেও চলবে । ঢিলা বা কুলুখ মাটির হতে পারে । তাছাড়া ছেড়া কাপড় , কচুরীপানার শুকনাে শিকড় , শুকনাে পাতা , টয়লেট পেপার ইত্যাদি দ্বারা হতে পারে । মনে রাখতে হবে , পেশাব করার পর কারাে যদি ফোঁটা ফোঁটা পেশাব বের হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তবে সে কুলুখ নিয়ে কিছুক্ষণ পায়চারী করবে।
অজুর বর্ণনা বিস্তারিত
অজুর ফরজ কয়টি ও কি কি
অজুর ফরজ চারটি : যথা
১) সমস্ত মুখ ধােয়া অর্থাৎ কপালের উপর চুলের গােড়া থেকে থুতনীর নীচ পর্যন্ত এবং এক কানের গােড়া থেকে আরেক কানের গােড়া বা লতি পর্যন্ত পরিপূর্ণ মুখমণ্ডল ধোয়া।
২) কনুইসহ দুই হাত ধােয়া।
৩) মাথার চারভাগের এক ভাগ মাসেহ করা বা মুছে দেয়া।
৪) টাখনুসহ দুই পা ধােয়া। উল্লেখ্য যে , হাত , পা এবং মুখমণ্ডলের সমস্ত জায়গায় পানি পৌঁছে একবার ধোয়া ফরজ এবং তিনবার ধােয়া সুন্নাত।
মনে রাখতে হবে যে , একটি পশমের গোড়াও যদি শুকনাে থাকে তবে অজু হবে না ।
অজুর সুন্নাত কয়টি ও কি কি
১) বিসমিল্লাহ বলে অজু শুরু করা।
২) ঘুম থেকে ওঠার পর দুহাত কবজি পর্যন্ত তিন বার ধােয়া ।
৩) মিসওয়াক করা।
৪) তিনবার কুলি করা।
৫) তিনবার নাকে পানি দিয়ে নাক সাফ করা ।
৬) দাঁড়ি ঘন হলে হাতে পানি নিয়ে উপর ও নীচ থেকে দাঁড়ি খিলাল করা
৭) হাত ও পায়ের আঙুল খিলাল করা।
৮) সমস্ত মাথা মাসেহ করা ।
৯) দু ’ কান মাসেহ করা ।
১০) অজুর তারতীব বা ধারাবাহিকতা রক্ষা করা ।
১১) প্রত্যেক অঙ্গ ডান দিক হতে ধোয়া শুরু করা ।
১২) একস্থান শুকানাের পূর্বে আরেক স্থান ধোয়া ।
১৩) ঘাড় মাসেহ করা ।
১৪) যেসব অঙ্গ ধৌত করতে হয় তা তিনবার করে ধোয়া।
কুরআন শিক্ষা কোর্স। কায়দা শিখুন মাত্র তিন দিনে তাজবিদসহ। learning Quran in bangla. Quran learning bangla tutorial. ধারাবাহিক সবগুলো ভিডিও পেতে এখান থেকে দেখা শুরু করুন অথবা আমাদের ইউটিউব চ্যানেল KassBD সাবস্ক্রাইব করুন।
অজুর মুস্তহাব কয়টি ও কি কি
১)উঁচু স্থানে বসে অজু করা । ।
২) কিবলামুখী হয়ে অজু করা ।
৩) ডান হাতে পানি নিয়ে কুলি করা ও নাকে পানি দেয়া ।
৪) বাম হাত দিয়ে নাক সাফ করা ।
৫) নামাজের ওয়াক্ত হওয়ার পূর্বেই অজু করা ।
৬) অজুর সময় কারাে সাহায্য না নেয়া ।
৭) অজুর সময় কথা না বলা।
৮) দু ' কানের ছিদ্রে আঙুল ঢুকিয়ে কানের ভিতরে মাসেহ করা ।
৯) অজুর শেষে কালেমা শাহাদাত পাঠ করা।
অজুর মাকরূহ কয়টি কি কি
১) প্রয়ােজনের বেশি পানি ব্যয় করা।
২) অপ্রেয়ােজনীয় কথা বলা ।
৩) মুখে বাম হাত দিয়ে পানি দেয়া।
৪) বিনা প্রয়ােজনে কোনাে অঙ্গ তিনবারের বেশি ধােয়া।
৫) অজুর পর হাতের পানি ছিটানাে। ৬) নাপাক স্থানে বসে অজু করা।
অজু ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কি কি
অজু ভঙ্গের কারণ সাতটি :
১) পেশাব পায়খানার রাস্তা দিয়ে কোন কিছু বের হলে ।
২) মুখ ভরে বমি করলে। তবে অল্প বমি করলে অজু ভঙ্গ হবে না । অবশ্য অল্প অল্প করে যদি এতটুকু বেশি বমি করে যা এক সাথে করলে মুখ ভরে যেত তবে তাতেও অজু ভঙ্গ হবে ।
৩) শরীরে কোনাে জায়গা হতে রক্ত , পুঁজ , বা ফোঁড়ার পানি বের হয়ে গড়িয়ে পড়লে ।
৪) থুথুর সাথে থুথুর পরিমাণের সমান বা তার চেয়ে বেশি রক্ত বের হলে।
৫) পাগল , মাতাল বা বেহুশ হলে।
৬) চিৎ বা কাত হয়ে বা হেলান দিয়ে এ পরিমাণ ঘুম গেলে যে , যে জিনিসের উপর ঘুমাবে তা সরিয়ে নিলে ঘুমের কারণে ঘুমন্ত ব্যক্তি পড়ে যাবে ।
৭) রুকু - সিজদা বিশিষ্ট নামাজে উচ্চস্বরে হাসলে।
গােসলের বিবরণ
গােসলের ফরজ কয়টি ও কি কি
গোসলের ফরজ তিনটি
১) গড়গড়াসহ কুলি করা ।
২) নাকে পানি দিয়ে নাক সাফ করা।
৩) সমস্ত শরীর উত্তমভাবে ধৌত করা। যেন একটি পশমের গােড়াও শুকনাে না থাকে।
গােসলের সুন্নাত কয়টি ও কি কি
১) নিয়ত করা।
২) বিসমিল্লাহ বলে কবজি পর্যন্ত দু ' হাত ধােয়া।
৩) গোসলের পূর্বে শরীরের নাপাক অংশ এবং লজ্জাস্থান ধােয়া।
৪) গড়গড়া করা ।
৫) তিন বার নাকে পানি দেয়া ।
৬) মিসওয়াক করা ।
৭) সমস্ত শরীর তিনবার ধােয়া।
৮) গোসলের পূর্বে অজু করা ।
৯) প্রয়ােজনের চেয়ে বেশি পানি ব্যবহার না করা ।
গােসল ফরজ হওয়ার কারণ কয়টি ও কি কি
গোসল ফরজ হওয়ার কারণ চারটি
১) যৌন উত্তেজনার সাথে বীর্যপাত হলে । যেমন স্ত্রী সহবাস , স্বপ্নদোষ , হস্ত মৈথুন , যৌন আলােচনা বা কল্পনার দ্বারা হয়ে থাকে । তবে উত্তেজনাবিহীন রােগের কারণে বীর্যপাত হলে বা যৌন উত্তেজনার সময় যৌনাঙ্গে আঠালাে পানি আসলে গােসল ফরজ হবে না বরং অজু ভঙ্গ হবে ।
২ . পুরুষ ও স্ত্রীলােকের গুপ্তাঙ্গ একত্রে মিলিত হলে। চাই বীর্যপাত হোক বা না হোক।
৩) হায়েজ বা মাসিকের রক্তস্রাব বন্ধ হলে।
৪) নিফাস বন্ধ হলে।
তায়াম্মুমের বিবরণ
তায়াম্মুমের ফরজ কয়টি ও কি কি
তায়াম্মুমের ফরজ তিনটি
১) নিয়ত করা ।
২) সমস্ত মুখ একবার মাসেহ করা । ৩) দুই হাতের কনুইসহ একবার মাসেহ করা।
তায়াম্মুম করার নিয়ম বা পদ্ধতি
প্রথমে দুই হাতের আঙুল ফাকা করে মাটি বা মাটি জাতীয় বস্তুর উপর মারতে হবে , এবং একটু ঝেড়ে নিতে হবে যাতে বড় বালিকণা থাকলে পড়ে যায় । তারপর দুই হাত দিয়ে সমস্ত মুখ এমনভাবে মাসেহ করবে যাতে মুখের এক চুল পরিমাণ স্থান ও বাদ না পড়ে ।
তারপর দ্বিতীয়বার আবার পূর্বের ন্যায় মাটিতে বা মাটি জাতীয় বস্তুর উপর হাত মারতে হবে এবং একটু ঝেড়ে নিবে । তারপর বাম হাতের মধ্যমা ,অনামিকা ও কনিষ্ঠ আঙুলীর পেট ও হাতের তালুর কিছু অংশ দিয়ে ডান হাত কনুইসহ বাইরের দিক একবার মাসেহ করবে । অতঃপর বৃদ্ধ ও শাহাদাত আঙুলের পেট ও হাতের তালুর সামনের অংশ দিয়ে কনুইসহ ডান হাতের ভিতরের দিক একবার মাসেহ করবে । অনুরূপভাবে ডান হাত দিয়ে বাম হাত মাসেহ করবে । অতপর দুহাতের অঙুলগুলাে খিলাল করবে হাতের আংটি থাকলে তা খুলে তায়াম্মুম করবে । উল্লেখ্য , অজুর জন্য যেভাবে তায়াম্মুম করবে , গােসলের জন্য সেভাবেই তায়াম্মুম করবে এবং অজু ও গোসলের জন্য তায়াম্মুম একবারই যথেষ্ট ।
যদি আমাদের ব্লগের লেখা ভালো লাগে তাহলে আপনার ফেসবুকে শেয়ার করে ইসলাম প্রচারে সহায়তা করুন।
আপনি যদি আমাদের ব্লগে লেখা পাঠাতে চান তাহলে যোগাযোগ করুন, আমরা আপনার লেখার জন্য আপনাকে সম্মানিত করব ইন শা আল্লাহ।
কোন মন্তব্য নেই