ইসলামে সংক্রমণ রোগ বলতে কি কিছু আছে
ইসলামে সংক্রমণ রোগ বলতে কি কিছু আছে
আসসালামু আলাইকুম!
প্রিয় kassBD বাসী বন্ধুরা! আশা করি সবাই ভালো আছেন। আজ আমরা এমন একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব যা নয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে। ইসলামে কি সংক্রমণ রোগ আছে? অর্থাৎ একজনের স্পর্শ পেলে কি আরেকজনের রোগ হবে? সহজ কথায় ইসলামে ছোয়াছে রোগ আছে কিনা? চলুন তাহলে মূল আলোচনার দিকে যাই।
- learning Quran basic part-1
- Quran learning bangla tutorial.
- কুরআন শিক্ষা কোর্স, কায়দা শিখুন।
ইসলামে কি সংক্রমণ রোগ আছে
এককথায় উত্তর দিলে উত্তর হবে নেই। কারণ হাদিস শরীফে মহানবী সাঃ বলেছেন,
The Prophet (ﷺ) said: There is no hamah, no infection and no evil omen; if there is in anything an evil omen, it is a house, a horse, and a woman.পেঁচা অশুভ নয়, ছোঁয়াচে রোগ নেই এবং কোন জিনিস অশুভ হওয়া ভিত্তিহীন। যদি কোন কিছুর মধ্যে অশুভ কিছু থাকতো তাহলে ঘোড়া, নারী ও বাড়ী এই তিন জিনিসের মধ্যে থাকতো।
এই হাদীসটি সম্পর্কে প্রথম প্রশ্ন, এই হাদিসটি সহীহ কিনা?
উত্তর হল, হাদীসটি সহিহ। এটি সূনান আবু দাউদ গ্রন্থের ৩৯২১ নম্বর হাদীস। হাদীসটি বর্ণনাকারী সা‘দ ইবনু মালিক (রাঃ)
এবার আমরা একটু বিস্তারিত জানার চেষ্টা করি। এবার প্রশ্ন জাগে। যদি না থাকে তাহলে তো আমাদের মসজিদে যাওয়া বন্ধ করা উচিৎ নয়। বা রোগের ভয়ে পালানো উচিত নয়। তাছাড়া আমরা তো দেখছি একজনের থেকে আরেকজনের কাছে রোগ ছড়াচ্ছে। যেমন কোভিড-১৯ চীন থেকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে।
তাহলে কি নবী মুহাম্মাদ সাঃ এর কথা ভুল?
এরকম অনেক প্রশ্নের উদয় হবে আমাদের মনে। চলুন এগুলো নিয়ে একটু জানার এবং বুঝার চেষ্টা করি।
উপরে বর্ণিত হাদিসের দিকে আবারও লক্ষ্য করুন। এখানে নবি (স) স্পষ্ট করে বলে দিলেন যে, এই পৃথিবীর কোনো কিছুই অশুভ না। কোনো কিছুর মধ্যে অশুভ লক্ষণ নেই । তিনি আরো বললেন, যদি কোনো কিছুর মধ্যে অশুভ লক্ষণ বা সংক্রমণ থাকতো, তাহলে ঘোড়া, নারী আর বাড়িতে থাকতে পারতো। কিন্তু, শুরুতেই যেহেতু উনি বলেছেন কোনো কিছুর মধ্যে অশুভ চিহ্ন নেই, তাই ঘোড়া, নারী আর বাড়িতেও থাকার প্রশ্নই ওঠেনা।
এবার চলুন হাদীসটি ব্যাখ্যা করা করি।
পেঁচা অশুভ নয় - কেন বললেন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ?
আমরা জানি এবং শুনেছি ও পড়েছি যে, পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে পেঁচাকে অশুভ প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। অনুরূপ ভাবে, জাহেলী যুগে পেঁচার ডাক এবং সফর মাসকে কূলক্ষণে মনে করা হত। পেঁচা ডাকলে মনে করা হতো অমঙ্গল আসতে পারে। সেসময় পেঁচার ডাক শুনলে ঘরের সিঁড়িতে ঢেলে তা পবিত্র করার প্রচলন ছিল।
গ্রামবাংলায় এখনো বলা হয় রাতে পেঁচা ডাকলে খারাপ কিছু ঘটে। নবি (স) এই হাদিসে এই কথাই বললেন যে, পেঁচা খারাপ কিছু না। এতে অশুভ কিছু নেই। বরং এটা আল্লাহ পাকেরই সৃষ্টি। পেঁচার ক্ষমতা নাই সে কারো অনিষ্ট করবে,যদি আল্লাহ তাকে ক্ষমতা না দেন। এছাড়া বাংলাদেশের অধিবাসী অনেক সম্প্রদায় যেমন- মান্দি, হাজং, গারোদের কাছে পেঁচা পূজনীয় পাখি। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে লক্ষ্মীর বাহন হিসেবে পেঁচাকে শুভ শক্তির প্রতীক হিসেবেই দেখা হয়।
অর্থাৎ এই হাদিস দ্বারা আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বুঝলেন আল্লাহর কোনো সৃষ্টির মধ্যে অশুভ কিছু নেই। বা সংক্রমণ বলতে কিছু নেই। অর্থাৎ কোনো প্রানীর ক্ষ্মতা নেই কারো ক্ষতি করার যদি আল্লাহ তাকে ক্ষমতা দেন। কেননা আল্লাহর সৃষ্টিকে সবকিছু করার ক্ষ্মতা আল্লাহ তায়ালাই দিয়েছেন। একজন মুসলিম হিসেবে আল্লাহকে সব ক্ষমতার উৎস মনে করা আপনার ঈমানী দায়িত্ব। এছাড়া এরকম অনেক দৃষ্টান্ত আছে, যেমন ইব্রাহীম আঃ যখন ইসমাঈল আঃ কে কুরবানী করতে চেয়েছিলেন তিনি কিন্তু পারেন নি কারণ আল্লাহ সেই তরবারি থেকে কাটার ক্ষমতা তুলে নিয়েছেন। এরকম অনেক ঘটনা সাক্ষী দেয় আল্লাহর কোনো সৃষ্টির মধ্যে অশুভ শক্তি নেই বা ক্ষমতা নিজের নেই আল্লাহ না দিলে।
ইসলামে ছোঁয়াচে রোগ নেই - বিশ্বনবী কেন বললেন?
আরো সহজ করে বুঝার জন্য নিচের লেখাটি পড়ুন। এখানে একটি ঘটনা যুক্ত করা হয়েছে।
মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) যখন বলেন যে, ছোঁয়াচে রোগ বলতে কিছু নাই, তখন এক বেদুইন আরব মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল, "মরুভূমিতে সুস্থ সবল উট ঘুরে বেড়ায় কিন্তু তাদের মধ্যে খুজলী-পাঁচড়ায় আক্রান্ত উট এসে পড়ে এবং সবগুলোকে ঐ রোগে আক্রান্ত করে ছাড়ে। অথচ আপনি বলছেন, ছোঁয়াচে রোগ নেই। তখন মহানবি (স) তাকে উত্তর দিলেন, "তাহলে প্রথম উটটিকে কে রোগাক্রান্ত করেছিলো?”
অর্থাৎ, মহান আল্লাহ প্রথম উটটিকে আক্রান্ত করেছিলেন বলেই অন্যান্য উটও আক্রান্ত হয়েছে। মোট কথা, রোগ ব্যাধি নিজে নিজে সংক্রমিত হয় না যদি আল্লাহর হুকুম না থাকে। আল্লাহর হুকুমেই রোগ ব্যাধি সংক্রমিত হয়ে এক দেহ থেকে আরেক দেহতে যায়। সংক্রমনের এই ক্ষমতা রোগের নিজস্ব নয়; বরং আল্লাহ প্রদত্ত। তাই তিনি চাইলে সংক্রমণ হবে নতুবা হবে না ।
আমরা প্রায়ই দেখি,রোগির সংস্পর্শে আসার পরেও অনেকের রোগ ব্যাধি হয়না। যার জ্বলন্ত প্রমান হলো করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন কানাডার প্রাধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর স্ত্রী। এই খবর আমরা জানি। কিন্ত তার ওয়াইফের করোনা পজিটিভ আসার পরেও, তার সংস্পর্শে থেকে এখন অবধি জাস্টিন ট্রুডো করোনা আক্রান্ত হয়নি।
রোগীর কাছে গেলেই যে, সে রোগে আক্রান্ত হতে হবে এটা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। এমনটাই যে হতে হবে তা জরুরি নয় বরং কখনও হতে পারে আবার কখনও নাও হতে পারে। কারণ এটা আল্লাহ ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল। ভাইরাসের ইচ্ছার ওপরে না।
- আরো পড়ুন......
এবার হাদিসের দ্বিতীয় অংশের ব্যাখ্যায় আসি। এখানে বলা হয়েছিল অশুভ লক্ষ্মণ কোনো কিছুতে থাকলে আগে নারী, বাড়ী আর ঘোড়ায় থাকত। এ কথা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেন বলেছেন?
মহানবী সাঃ প্রথমে বলেছেন যে, আল্লাহর সৃষ্টি কোনো কিছুর মধ্যেই অশুভ কিছু নাই। এই বাক্য দ্বারা বোঝাই যাচ্ছে যে, পরবর্তীতে উল্লেখিত ঘোড়া, নারী ও বাড়ির মধ্যেও নাই। অর্থাৎ, ফেমিনিস্টদের এটা ভেবে ক্ষেপার কারণ নাই যে, নবী (স) নারীদের প্রতি নিচু চোখে তাকাতেন। প্রতিটি ঘটনার পিছনে থাকে ঘটনা। তাই আগে জানা উচিৎ ঐ সময়ে সমাজের মানুষের কেমন বিশ্বাস ও চিন্তা ভাবনা ছিল।
যে প্রেক্ষাপটে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই কথাটি বলেছেন তা হচ্ছে,
মূলত, জাহেলি যুগে আরবে একটা প্রবাদ ছিলো যে, এই ৩ শ্রেনির মধ্যে মাঝেমধ্যে অশুভ লক্ষণ প্রকাশ পায়। এই বিশ্বাস জাহেলি সমাজের লোকদের মাঝে বিরাজমান ছিল। তাই নবি (স) এই প্রবাদ বা বিশ্বাসকে দূর করতে বা বাতিল ঘোষণা করতেই এই কথা বলেছিলেন। আশা করি ব্যপারটি সবার কাছে ক্লিয়ার।
ইসলামে সংক্রমণ রোগ বলতে কিছু নেই। যদি আমরা এই বিশ্বাস করতে না পারি তবে বুঝতে হবে আমরা ঈমানের দিক থেকে পিছনে আছি। আমরা আল্লাহকে সব ক্ষমতার উৎস বলে বিশ্বাস করতে পারছিনা। আমরা অন্যের উপর ক্ষমতা ভাগ করে দিচ্ছি। আমরা শিরকের মত গুনাহ করছি। আল্লাহ আমাদেরকে আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করার তাউফিক দান কিরুন।
এখন কিছু কথা বলব তাদের উদ্দেশ্যে যারা ইসলামের এই বিষয় সাধারণ মানুষের মাঝে এমন ভাবে উপস্থাপন করে যেন মানুষ বিভ্রান্ত হয়। একটা কথা মনে রাখবেন, ইসলামের শিকড় অনেক মজবুত। এটা সরাসরি আল্লাহ প্রদত্ব জীবন বিধান। এখানে মানুষের জীবনের সব সমস্যার সমাধান আছেন। আপনাদের মত কূটনীতিবাজরা সাধারণ মানুষকে সাময়িক ভাবে বিভ্রান্ত করতে পারলেও যারা ইসলাম নিয়ে পড়াশোনা করে তাদের কিছুতেই হারাতে পারবেন না। তারা ঠিকই আসল খবর বের করে আনবে। এই সব কাজ বাদ দিয়ে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ এবং একমাত্র জীবন বিধান মনে প্রাণে গ্রহণ করে ইহকাল ও পরকালের শান্তি নিশ্চিত করুন।
কোন মন্তব্য নেই