মহামারী বা দূর্যোগের সময় কি মসজিদে জামাতে নামাজ পড়া বাধ্যতামূলক

মহামারী বা দূর্যোগের সময় কি মসজিদে জামাতে নামাজ পড়া বাধ্যতামূলক 







আসসালামু আলাইকুম। 
প্রিয় kassBD বাসী! আশা করি সবাই ভালো আছেন। আবারো আপনাদের মাঝে একটি বিষয় নিয়ে হাজির হলাম। আশা করি সবাই ভালো আছেন। বর্তমান বিশ্বে এখন ইতিহাসের এক ভয়াবহ মহামারী চলছে। যার ফিলে মুসলমানদের সবচেয়ে পবিত্র স্থান কাবা শরীফের হজ্ব ওমরা বা অন্যান্য আমল জামাতের সাথে আদায় করার প্রতি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। মসজিদ থেকে আজানের মত হাইয়া আলাসসালাহ এর স্থানে আলা সাল্লু ফি বুয়ুতিকুম বলা হচ্ছে, অর্থাৎ ঘরে নামাজ পড়। এই পরিস্থিতিতে এক দল মানুষ এর বিরোধিতা করছেন আবার আরেক দল মানুষ এর পক্ষে বলছেন। আসলে আমাদের জানা দরকার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জামানায় এমন কোনো ঘটনা ঘটেছে কিনা। তাহলেই আশা করি একটি সমাধানে আসা যেতে পারে।



করোনা ভাইরাস এর মহামারীতে মসজিদে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে যে বিতর্ক 



যারা মসজিদে যাওয়ার পক্ষে তাদের দাবি হচ্ছে আল্লাহর দেয়া জীবন আল্লাহর জন্য চলে গেলে যাবে, মসজিদে যাওয়া বন্ধ করা যাবেনা। আবার কেউ কেউ বলেন মারে আল্লাহ রাখে কে। আবার কেউ বলেন মৃত্যু থেকে পালিয়ে বাঁচতে কেউ পারবেনা। আবার কেউ বলেন যদি আল্লাহর ঘরে ভাইরাস যেতে পারে তবে সেই ভাইরাস কি আমার ঘরে আসতে পারবেনা? ইত্যাদি আরো অনেক ধরনের মন্তব্য সোসাল মিডিয়াতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিষয়টিকে অনেকে ধর্মের জন্য অবমাননা হিসেবে দেখছেন। কেউ কেউ তো বলছেন, এটা কেমন আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা যে মাত্র ভাইরাসের কারণে তোমরা মসজিদ ছেড়ে পালাচ্ছো। এর চেয়ে বড় আজাব আসলে কোথায় গিয়ে পালাবে। বিপদের সময় তো আল্লাহর ঘরে যেতে হয়।আল্লাহকে বেশি বেশি স্বরণ করতে হয়।


এই কথাগুলো সত্যি বলতে যদি এমন কেউ বলেন যে সবসময় মসজিদে গিয়ে ইবাদত করেন তাহলে খুবই ভালো কথা। কিন্তু ব্যপারটি এমন নয়। এসব কথা বলে কিছু ফেসবুক ব্যবহার কারী যারা মহামারী না থেকলেও মসজিদে যেত না তারা বলে বেড়াচ্ছে। যারা মসজিদে জান তারা আলেমদের কথা শুনেন। কুরআন হাদিসে কি বলা আছে তা জানার চেষ্টা কছেন। আবেগকে দূরে রেখে বিবেককে প্রাধান্য দিচ্ছেন।


নামাজ আগে নাকি জীবন আগে


আপনারা অনেকেই অবগত আছেন যদি নামাজে দাঁড়ানোর পর শোনা যায় ঘরে বা মসজিদে আগুন লেগে গেছে তবে কিন্তু নামাজ ছেড়ে দিয়ে জীবন বাঁচাতে হবে। আগে জীবন বাঁচাও পরে এই নামাজ আবার পড়ে নিতে হবে। যেখানে বিপদের সময় নামাজ ছেড়ে পালাতে বলেছেন সেখানে  করোনার মত প্রাণঘাতী ভাইরাসের কারণে কি শুধু জামাত ত্যাগ করা যাবে না?? আরো জানা দরকার, যখন ইসলামের সৈনিকগণ জিহাদের ময়দানে থাকে তখন বিপদের সময় তারা শত্রুদের দিকে মুখ করে নামাজ পড়তে পারবে। নামাজের মধ্যে যদি শত্রুরা অন্যদিকে চলে যায় তাহলে ঐ দিকে ঘুরতে পারবে। তখন আর পশ্চিম বা কিবলা উদ্দেশ্য থাকবেনা। তাই আমাদের উচিত জানা অতপর জানা। নয়ত এই যুগের এসে মানুষের কাছে ইসলাম হাস্যকর জিনিসে পরিনত হবে। যে ধর্ম মানুষের জীবনের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেনা সেটা কোনো ধর্ম হলো নাকি এমন প্রশ্ন আসবে।



learning quran basic part-1

মহামারী কি শুধু কাফেরদের কারণে আসে


অনেকে দেখা যায় বলছেন অমুক দেশ বা অমুক কাফেরদের কারণে করোনা আসছে। বা এটা কাফেরদের কারণে আল্লাহার গজন হিসেবে আসছে। আসলে ব্যপারটি তা নয়। শুধু কাফেরদের কারণে যেমন বিপদ আসেনা তেমনি বিপদ আসলে কাফের মুসলিম দেখা হয় না।পাপের কারণে বিপদ আসে। কারণ আল্লাহ বলেছেন, জ্বলে স্থলে তোমরা যে বিপর্যয় দেখতে পাচ্ছো, এসব মানুষের হাতের কামাই বা উপার্যন। 


এখানে কিন্তু আল্লাহ বলেন নি কাফেরদের উপার্জন। তাই কাউকে দোষ না দিয়ে নিজে আল্লাহর কাছে নিজের পাপের জন্য তাওবাহ ইসতিগফার করুন। আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন।


এবার আসুন দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তগণ করোনা ভাইরাসের সময় মসজিদে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে কি বলেন


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। তিনি মাওলানা এবং বিসিস শিক্ষা ক্যাডারে আছেন। নাম ডক্টর যোবায়ের এহসান হক। তিনি তাঁর ফেসবুক আইডি থেকে নিচের লেখাটি লিখেছেন। পড়ে দেখুন তি কি বলেছেন।

তিনি তার লেখার শিরোনামে বলেন, 

দুর্যোগে মসজিদের জামাআতবর্জন অনুমোদিত 


নোভেল করোনা ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কায় মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে ওই দেশগুলোর আলিমগণের মতামতের ভিত্তিতে জনগণকে নামায আদায়ের জন্য মসজিদে যেতে বারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশে সরকারিভাবে সুস্পষ্ট কোন নির্দেশ আসেনি যদিও ইসলামিক ফাউন্ডেশন হতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
কিন্তু ইতোমধ্যে কিছু হুঙ্কার এসে গেছে: মসজিদে কিছুতেই জামাআত বন্ধ করা যাবে না, ইত্যাদি। 


তিনি এদেশের কিছু মানুষের বোকামির কথা উল্লেখ করে বলেছেন। অনেকে না জানার কারণে এমনটা করছেন। যেমন তার লেখায় বলেছেন।


এই শ্রেণির মানুষ সবসময় ইসলামকে হাস্যকরভাবে উপস্থাপন করেন।  ইসলাম জবর ও নেই, কদরও নেই। ইসলাম কখনো বাস্তবতাকে অস্বীকার করেনি, তাই রাসূলুল্লাহ (সা) সফরের সময় বৃষ্টি হলে বাহনে নামায আদায়ের অনুমতি দিয়েছেন। প্রবল বৃষ্টির দিনে ইবন আব্বাস (রা) তার মুআজ্জিনকে নির্দেশ দিয়েছেন حي على الصلاة এর পরিবর্তে صلوا في بيوتكم বলতে, মানে তোমরা ঘরে নামায আদায় কর। একালের ন্যায় সেকালেও কিছু মানুষ ইবন আব্বাসের এই আদেশ শুনে হতভম্ব হয়ে যায়, তখন ইবন আব্বাস বলেছিলেন, আমার চেয়ে যিনি সেরা অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (সা)ও এমন অনুমতি দিয়েছেন। 


তিনি উপরের হাদিসের উদাহরণ দিয়ে নিচের কথাগুলো যুক্ত কতেছেন।

করোনা ভাইরাস দেখা যায় না বলে মানুষ হয়ত এর ভয়াবহতা বুঝতে পারে না। ভাবখানা এমন, ঝড় নাই, তুফান নাই, কেন মসজিদে যাওয়া বন্ধ করতে হবে? বাস্তবতা হল: প্রবল বৃষ্টি বা প্রচণ্ড ঠাণ্ডার তুলনায় করোনা ভাইরাস অনেক ভয়ঙ্কর। আপনি জানেন, আপনার চারপাশে সাপ আছে, কিন্তু আপনি দেখতে পাচ্ছেন না। কী ভয়ঙ্কর। কাজেই অদৃশ্য দুর্যোগকালে প্রয়োজনে মসজিদের জামাত পরিহার করুন। এ অসুবিধাকে ভিন্ন একটি সুযোগ গ্রহণে ব্যবহার করা যায়। ঘরকে মসজিদ ঘর বানিয়ে নিন, ছেলেরা বাসায়, স্কুল-কোচিং নেই, তাদের সাথে জামাতে সালাত আদায় করুন, দোয়া-দরুদ শিক্ষা দিন, সোহবত দিন।




মহামারির সময় মসজদে গিয়ে জামাত পড়া কি ওয়াজিব



তাহলে উপরের আলোচনা থেকে বুঝতে পারি। এমন কিছু ঘটনা আগেও ঘটেছে। এবং মানষজন এর বিরোধিতাও করেছেন কিন্তু যখন রাসুলুল্লাহ সাঃ এর কথা বলা হলো তখন সবাই চুপ হয়ে গেলেন। আসলে ইসলাম এত কঠিন ধর্ম নয়। আমরা নিজেরা না বুঝার কারণে ইসলামকে কঠিক করে ফেলছি। জামাতে নামাজ পড়া ওয়াজিব। জামাত ত্যাগ করার অনেক কারণ রয়েছে। অর্থাৎ অনেক উল্লেখ যোগ্য কারণে জামাত ত্যাগ করা যায়। দ্বীনী অনেক কাজের স্বার্থেও জামাত ত্যাগ করা যায়।  যেমন কেউ পাহাড়ার দায়িত্বে নিয়জিত থাকলে তার জন্য কিন্তু জামাত ওয়াজিব নয়। আবার অনেক কাজ যেমন ইলমি কাজ বা ইজতিহাদের কাজে ব্যস্ততার কারণেও অনেক ইমাম জামাত ত্যাগ করেছেন। তাহলে যেখানে মানুষের জীবন শংকায় পড়েছে সেখানে কি জামাত ত্যাগ করা যাবেনা? নিজের বিবেক দিয়ে চিন্তা করুন।  এই বিষয় নিয়ে কাঁদা ছুড়া ছুড়ি বন্ধ করুন। একমুসলিম ভাইকে অপর মুসলিম ভাই বকা দেয়া থেকে বিরত থাকুন। কাউকে গালি দেয়া কবিরা গুনাহ। ওজরের কারণে জামাত ত্যাগ করলে কারো গুনাহ হবেনা। অথচ আপনি গালি দেয়ার কারণে গুনাহগার হবেন।




আরো একটি কথা না বললে নয়। এই মহামারীর সময় যদি কেউ মসজিদে জামাত করতে যায় আর আল্লাহ না করুক তাকে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত করলে তাহলে হয়ত সে বলবে আমি মসজিদে যাওয়ার কারণে ভাইরাসে ধরেছে। বা তার পরিবারের কেউ বলবে অথবা পাশের বাড়ির কেউ বলবে। এমন কথা যে বলবে তার কিন্তু সরাসরি শিরকের গুনাহ হয়ে যাবে। আল্লাহ আমাদের মাফ করুন। দ্বীনের সহিহ বুঝ দান করুন। আল্লাহ আমাদেরকে সব ধরনের বিপদ থেকে রক্ষা করুন।


আরো পড়ুন... ইসলামে ছোয়াচে রোগ, ইসলামে অশুভ

ইসলামে কি সংক্রমণ বলতে কিছু আছে?

কোন মন্তব্য নেই

enot-poloskun থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.