কীভাবে সহজে দ্রুত কুরআন মুখস্ত করবেন
কীভাবে সহজে দ্রুত কুরআন মুখস্ত করবেন
আসসালামু আলাইকুম!
প্রিয় KassBD বাসী! সবাই কেমন আছেন? আশা করি ভালো আছেন। মহান আল্লাহ তায়ালার রহমতে আমিও ভালো আছি। আজ এমন একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব যা নিয়ে সচরাচর কেউ আলোচনা করেনা। আজ জানতে পারবেন কীভাবে দ্রুত কুরআন মুখস্ত করতে হয়। এই ব্লগে মূলত আমি আমার চিন্তা বা মতামত প্রকাশ করি। আমার জীবনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। আমার জীবিনে যে শিক্ষা কাজে লেগেছে তাই শেয়ার করি।
আজ জানবেন হাফেজরা কীভাবে হাফেজ হয় বা কীভাবে দ্রুত কুরআন মুখস্ত করে। দেখুন সেই পদ্ধতি আপনার জীবনে কাজে আসে কিনা। আশা করি কাজে আসবে যেহেতু সাড়া বিশ্বের হাফেজগণ এভাবে কুরআন মুখস্ত করতে পারছেন। আপনিও পারবেন ইন শা আল্লাহ। চলুন মূল কথায় আশি।
নামাজ পড়ার জন্য ছোট ছোট সূরাগুলো শুদ্ধ করে পড়া শিখুন।Quran learning basic part-1 এখানে ধারাবাহিকভাবে ছোট সূরাগুলো মশকের মাধ্যমে পড়ানো হয়েছে। দেখতে পারেন ভিডিওটি আমাদের ইউটিউব চ্যানেল থেকে।
হাফেজগণ কীভাবে কুরআন মুখস্ত করে
আগে বলব কয়টি পর্যায়ে কুরআন মুখস্ত করা হয়। মূলত যারা হাফেজ হন তারা কুরআন শরীফকে প্রায় ৭ টি পর্যায়ের মাধ্যমে মুখস্থ করে থাকেন। সেই পরিভাষা গুলো নিচে দেয়া হলো।
- ১) নাজেরা
- 2)সবক
- ৩)সাথ সবক
- ৪)আমুক্তা
- ৫)সবিনা
- ৬)প্রশ্নোত্তর পর্ব
- ৭)নামাযে পড়া
কুরআন মুখস্ত করার ক্ষেত্রে নাজেরা বিভাগ কাকে বলে
প্রথমে বলব তাদের কুরআন শিক্ষার নাজিরা পদ্ধতি নিয়ে। নাজিরা মানে দেখে দেখে পড়া। তারা মূলত সবার আগে পবিত্র কুরআনকে একদম সহিহ ভাবে দেখে শেখার চেষ্টা করে। এই কোর্সের নামই নাজেরা বিভাগ। এখানে দেখে দেখে কুরআন শিক্ষা দেয়া হয়। এমন ভাবে শিখানো হয় যেন কুরআন শরীফ এর কোনো তাজবিদ সম্পর্কে তারা অনভিজ্ঞ না থাকে। তাজবিদসহ সহীহ ভাবে যখন পড়া শেষ হয় তখন দ্রুপ পঠনের উপর গুরুত্ব দেয়া হয়। অর্থাৎ যত দ্রুত পড়তে পারবে সহিহ শুদ্ধ ভাবে মূলত তত তারাতাড়ি মুখস্ত করা সম্ভব হয়। তাই সহিহভাবে পড়া শেখানোর জন্য কোনো কোনো শিক্ষক একখতম কুরআন পড়ান দ্রুত যেন শিক্ষার্থী পড়তে পারে।
একটি কথা মনে রাখবেন আপনি যখন কোনো কিছু দ্রুত পড়তে পারবেন, সেই ব্যপারটা আপনি খুব দ্রুত মুখস্ত করতে পারবেন। আপনি যদি ভালো মত পড়তেই না পারেন তবে মুখস্ত করতে অনেক দেরি হবে। এমনকি মুখস্ত করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। অনেক শিক্ষার্থী একারণে মাঝপতথে হারিয়ে যায় কারণ তার সহপাঠীরা অনেক দ্রুত বেশি বেশি মুখস্ত করে সামনে চলে আর তার পঠনে দূর্বলতা থাকার কারণে হতাশ হয়ে ভাবতে থাকে, আমার মেধা কম বা আমি দূর্বল অথাবা আমাকে দিয়ে হবেনা।
সুতরাং আপনি যখন কুরআন শিখতে চাইবেন অবশ্যই আগে সহিহভাবে দ্রুত পড়া শিখুন। তারপর মুখস্ত করা শুরু করুন তাহলে আগ্রহ নষ্ট হবেনা বা দ্রুত মুখস্ত করতে পারবেন ইন শা আল্লাহ।
কুরআন মুখস্ত করার ক্ষেত্রে সবক কি বা কাকে বলে
সবক বলা হয় প্রথমবার যেই পড়াটা মুখস্থ করা হয় সেটাকে। অর্থাৎ দ্রুত পড়া শেখার পর মুখস্ত করার সবক দেয়া হয়। মূল কথা সবক মানে নতুন পড়া যা মুখস্ত করা হয়। সবক পড়ার একটি সময় নির্ধারিত আছে। যে সময় মানুষের মনোযোগ সবচেয়ে বেশি থাকে সে সময় সবক বা নতুন পড়া মুখস্ত করার সময় নির্ধারণ করা হয়। আমাদের দেশের হিফজুল কুরআন বিভাগ গুলোতে মাগরিবের নামাজের পড় থেকে এশার নামাজ পর্যন সবক পড়ার সময়। যার কারণে অনেক মাদ্রাসায় এশারের নামাজ একটু দেরি করে পড়া হয়। এই সময় সব মনোযোগ দিয়ে ছাত্র ছাত্রীরা কুরআন মুখস্ত করে থাকে। মুখস্ত করা শেষ হলে এটা এশারের পর আর পড়া হয় না। এশারের পর পড়া হয় অন্য পড়া। সেটা একটু পর বলছি।
সবক যা মুখস্ত করা হয় মাগরিবের পর সেটা আবার ভোর রাতে উঠে রিভিসন দেয়া হয়। তার পর ফজর নামাজের আগেই এই সবকটা উস্তাদকে শোনাতে হয়। এই হলো নতুন পড়া মুখস্ত করার নিয়ম যাকে বলা হয়।
কুরআন মুখস্ত করার ক্ষেত্রে সাত সবক কি বা কাকে বলে?
সাত সবক হচ্ছে নতুন যে পড়াগুলো সবক পড়া হয়েছে এগুলোকে নিয়মত আবার নিয়মিত শোনানো। তবে যেহেতু এক পারা ২০ পৃষ্ঠায় হয় তাই সবগুলো শোনা অনেক সময় ষিক্ষকের জন্য সময় সাপেক্ষ তাই একটি নিয়ম করা হয়েছে অন্তত সাত পৃষ্টা শোনা হবে। তবে অনেক মাদ্রাসায় চলমান পারার সবগুলো পৃষ্ঠা পড়া শোনা হয়। যা হোক সর্বোচ্চ ১৯ পৃষ্ঠা পর্যন্ত শোনা যেতে পারে। তারপর আবার নতুন পারা শুরু হয়। মোট কথা সবকের পড়াগুলো প্রতিদিন ফজরের পর সর্বোচ্চ ১৯ পৃষ্ঠা পর্যন্ত শোনানো হয়। নিয়ম সাত পৃষ্ঠা শোনানো। তাই এর নাম রাখা হয়েছে সাত সবক নামে।
কুরআন মুখস্ত করার ক্ষেত্রে আমুক্তা কি বা কাকে বলে
আমক্তা হচ্ছে সাত সবকের আগের পড়াগুলো। যেগুলো সবক এবং সাত সবক পড়া শেষ এগুলো আবার নিয়মিত প্রতিদিন পড়া হয়। এগুলো অন্তত ১০ পৃষ্ঠা করে উস্তাদকে শোনাতে হয়। কারো কারো থেকে এক পারা শোনা হয়। যাদের মুখস্ত অনেক বেশি হয়ে গেছে তাদের থেকে বেশি আমক্তা শোনা হয়। অন্যথায় পিছনের পড়া ভুলে যেতে পারে। আমক্তা শোনার সময় হচ্ছে দুপুর ১২ টা থেকে বিকাল পর্যন্ত। বিকালের পর আর আমক্তা শোনা হয় না। আমক্তা শোনার পাশা পাশি প্রতিদিন ছাত্রদের তিনপারা করে পিছনের পড়া তিলাওয়াত করার জন্য বলা হয়। অনেক সময় এটা হয়ে উঠেনা। কারণ সাধারণ পড়ার পড়। ক্লাসের পড়া পড়তে পড়তেই সময় চলে যায়।
কুরআন মুখস্ত করার ক্ষেত্রে সবিনা কি বা কাকে বলে
সবিনা হচ্ছে সাপ্তাহিক একটি পড়ার অনুষ্ঠান। সে দিন যার যত পারা মুখস্ত হয়েছে সেটা সারাদিন একে অপরকে শোনাবে। শিক্ষক এত পড়া শোনার সময় এক দিনে করতে পারবেন না। তাই ছাত্ররা একজন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আরেকজনকে শোনাবে। এভাবে পালাক্রমে সব পড়া শুনিয়ে একদিনে শেষ করতে হয়। এর নাম রাখা হয়েছে সবিনা।
কুরআন মুখস্ত করার ক্ষেত্রে প্রশ্নোত্তর পর্ব কি বা কাকে বলে
এটা হচ্ছে সবিনা কে কেমন পড়ল তার একটি মূল্যায়ন পর্ব বা অনুষ্ঠান বলা যেতে পারে। সেদিন সবাইকে শিক্ষক প্রশ্ন করে দেখেন কার পিছনের পড়া কেমন মনে আছে। সবিনাতে কার কয়টা ভুল হয়েছে তা জানা হয়। অর্থাৎ সবকিছুর জবাবদিহি করতে হয়।
এই হলো কুরআন মুখস্ত করার প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ম। তারপরে সবাই নিজ নিজ উদ্যোগ নিয়ে অনেক অনেক পড়ে। নামজে পড়ে, হাটতে বসতে পড়ে। শুধু পড়া আর পড়া। আর যারা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা দেয়ার ইচ্ছেতে পড়েন তাদের কথা বলে শেষ করা যাবে না। তার রাত দিন বলতে বুঝেন শুধু কুরআন চর্চা করা।
সাধারণ মানুষ কীভাবে সহজে দ্রুত কুরআন মুখস্ত করবে
এবার আসি সাধারণ মানুষের কথায়। অনেকের আগ্রহ থাকে কুরআন মুখস্ত করে নিজে নিজে হাফেজ হওয়া। এটা অসম্ভব কিছু নয়। আপনার যদি থাকে প্রবল ইচ্ছে শক্তি তাহলে আল্লাহ আপনার সহায় হবেন। কেননা মহান আল্লাহ নিজেই বলেছেন " আমি অবশ্যই কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি" তাহলে আল্লাহ যেহেতু বলেছেন তার মানে আর কোনো সন্দেহ নেই আপনি পারবেন।
নিয়মিত চেষ্টা করুন আর যতটুকু পড়বেন সেটা মুখস্ত রাখার জন্য উপরে উল্লেখিত নিয়ম অনুসরণ করতে পারেন। অথবা নিজের সময় মত যখন তখন হাটতে বসতে পড়তে থাকুন। সবচেয়ে বেশি নামাজে পড়ুন। তাহাজ্জুদ নামাজে পড়ুন। নফল নামাজে পড়ুন। আর ফরজ নামাজে তো পড়বেন অবশ্যই। এভাবে চেষ্টা অব্যাহত রাখুন।এভাবে চেষ্টা করতে থাকলে ইন শা আল্লাহ আল্লাহ আপনাকে নিরাশ করবেন না।
কোন মন্তব্য নেই