শবে বরাতের নামাজ পড়ার নিয়ম, শবে বরাতের গুরুত্ব ও ফজিলত

শবে বরাতের নামাজ পড়ার নিয়ম,শবে বরাতের গুরুত্ব ও ফজিলত 

শবে বরাত কবে, নামাজ পড়ার নিয়ম কি, শবে বরাতের ফজিলত
শবে বরাতের ফজিলত নামাজ পড়ার নিয়ম




আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় পাঠক! আশা করি সবাই ভালো আছেন। আজ আমরা জানব শবে বরাত অর্থ কি? শবে বরাতের নামাজ পড়ার নিয়ম বা কীভাবে শবে বরাতের নামাজ পড়তে হয়। এছাড়া জানব ভাগ্য রজনী বা শবে বরাতের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে। চলুন তাহলে মূল আলোচনার দিকে যাই।

  • শবে বরাত অর্থ কি 

প্রথমে আমরা জানব শবে বরাত অর্থ কি? এটি কোন ভাষার শব্দ। শবে বরাত মূলত একটি ফারসি শব্দ। শব অর্থ রাত আর বরাত মানে ভাগ্য। বলা হয়ে থাকে এই রাতে মহান আল্লাহ পরবর্তী বছরের জন্য তাঁর বান্দার ভাগ্য নির্ধারণ করে থাকেন। তাই এই রাতকে উপমহাদেশে মুসলিম শাসন চলাকালে শবে বরাত নাম রাখা হয়। তখন ফার্সি ছিল অফিসিয়াল ভাষা। এ থেকে এ অঞ্চলের মুসলমানদের মাঝে এই নামটি প্রসিদ্ধ হয়ে আসছে। আরবিতে এই রাতকে লাইলাতুল মুবারাকাহ বলা হয়। লাইলাতুন অর্থ রাত আর মুবারক অর্থ বরকতময় বা পূণ্যময়। অর্থাৎ পূণ্যময় রাত।


  • শবে বরাত কবে হবে

শবে বরাত একটি রাতে হয় আর সেটা আরবি শাবান মাসের ১৫ তম দিবাগত রাতে। অনেকে এই রাতে ইবাদত করে পরের দিন রোজা রাখেন। রাসূল সাঃ প্রতি মাসের মাঝের তিনদিন রোজা রাখতেন এমন কথা হাদিসে পাওয়া যায়। যেই দিনগুলোকে বলা হয় আইয়ামে বিদ বা শুভ্র দিন। চাইলে আপনিও রাখতে পারেন।

  • শবে বরাতের নামাজ কি ফরজ নাকি নফল


শবে বরাতের নামাজ অবশ্য নফল। কেউ না পড়লে তার গুনাহ হবেনা তবে সে এমক্ন একটি রাতে আল্লাহর সবচেয়ে উত্তম ইবাদত নামাজ থেকে দূরে রইল। তাই যথাসম্ভব নফল নামাজ পড়া যেতে পারে। আপনি যত নফল নামাজ পড়বেন এবং যে সওয়াব হবে সেগুলো আপনারই থাকবে। তাই নফলকে নফল এবং ফরজকে ফরজ জেনে যত পারেন নামাজ পড়ুন। আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভের জন্য সবচেয়ে উত্তম পথ হলো নামাজ। তার পর পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করা। যারা কুরআন পড়তে জানেন না তারা অবিশ্যই কুরআন পড়া শিখে নিন। আর যারা শিখেছেন তারা সহিহভাবে শিখুন। একসময় সহিহ ভাবে কুরআন শিক্ষা করার সুযোগ ছিল না কিন্তু এখন চাইলেই সহিহ শুদ্ধ ভাবে কুরআন শিক্ষা করার সুযোগ আছে। 


সহিহ শুদ্ধ ভাবে কুরআন শিক্ষা কোর্স করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল থেকে। Quran learning basic part-1 




  • শবে বরাতে কার দোয়া কবুল হয় না


এক হাদিসে আছে ব্যভিচারী ও মুশরিকের দুয়া আল্লাহ কবুল করেন না। আর যারা তাওবাহ করেন সবাইকে কবুল করেন। যারা আল্লাহ তায়ালার সাথে কাউকে শরীক করে তাদের বলা হয় মুশরিক। অনেক সময় মুসলমান ভাই বোনরা এমন কথা বলে ফেলেন যেটা আল্লাহ তায়ালার সাথে অন্য কারো শরীক করা হয়। তাই ইবাদতের ক্ষেত্রে বা আল্লাহ তায়ালার ক্ষমতার ক্ষেত্রে কাউকে শরীক করা যাবে না। যারা পিতা মাতার অবাধ্য তাদের দোয়াও কবুল হয় না। তাই কোনো অন্যায় করে থাকলে নিজের বাবা মায়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিন। কারণ বাবা মা আপনার জন্য দোয়া করলে সেটা আল্লাহ দ্রুত কবুল করবেন অনুরূপ তারা আপনার অন্যায়ের কারণে বিদদোয়া দিলে সেটাও আল্লাহ কবুল করে নিবেন। তাই বাবা মার সাথে খারাপ আচরণ করা যাবেনা।


যেহেতু শবে বরাত একটি পবিত্র রজনী তাই আমাদের উচিৎ এই রাতে একটু বেশি বেশি ইবাদতে নিয়োজিত থাকা। সবার জন্য আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করা। বিশেষ করে নিজের বাবা মা, বন্ধু বান্ধব, পাড়া প্রতিবেশি, আত্মীয় স্বজন দেশবাসী, সবার জন্য দোয়া করা।


  • কীভাবে দোয়া করলে আল্লাহ দ্রুত কবুল করেন


অনেকে দোয়া করার কৌশল জানেন না। প্রতিটি জিনিসের একটি নিয়ম আছে। এমন কিছু নিয়ম অবশ্যই আছে যেগুলো মেনে আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করলে আল্লাহ ফিরিয়ে দেন না। নিচে এমন কিছু কথা বলা হলো।


  •  হালাল রিজিক খাওয়া।
  • পবিত্রতা অর্জন করে দোয়া শুরু করা।
  • পশ্চিম দিকে মুখ করে নেয়া।
  • সম্ভব হলে নামাজের মত করে বসা।
  • চোখের পানি ছেড়ে দোয়া করা।
  • অন্যের জন্য দোয়া করা।
  • যা নিজের জন্য চাইবেন সেটা অন্যের জন্য চাওয়া তাহলে ফেরেশতাগণ আল্লাহর কাছে আপনার জন্য চাইবেন এবং আল্লাহ আপনাকে সেটা আগে দিবেন।
  • মা বাবার জন্য দোয়া করা।
  • চোখের পানি না এলে কান্নার মত করা।
  • দোয়ায় আল্লাহ তায়ালার একাত্ববাদের সাক্ষী দেয়া।
  • নবীজির সাঃ ও তাঁর পরিবারের জন্য দোয়া করা।
  • দোয়ার শেষে অবশ্যই দুরুদ রাখা।


আশা করি এই নিয়মগুলো মেনে দোয়া করলে আল্লাহ দ্রুত কবুল করবেন।

  • শবে বরাতের নামাজ পড়ার নিয়ম


যদি কুরআন ও হাদিস অনুযায়ী বলি তবে বলব শবে বরাতের জন্য আলাদা কোনো নামাজ নেই। শবে বরাতের জন্য নফল নামাজ পড়া যেতে পারে। এটাই শবে বরাতের নামাজ। এখন আপনি অন্যান্য দিন যেভাবে নফল নামাজ পড়েন সেভাবে বা সেই নিয়মে পড়তে পারেন। আর যদি মনে করেন শবে বরাত উপলক্ষে নামাজ পড়বেন তাহলে নামাজে দাঁড়ালে মনে মনে বলবেন আল্লাহ আমি শবে বরাতের নামজ একমাত্র তোমাকে রাজি এবং খুশি করানোর জন্য পড়ার নিয়ত করলাম আল্লাহু আকবার। এভাবে আপনি শবে বরাতের নামাজ পড়তে পাড়েন। অনেক ইমাম সাহেবগণ মুসল্লিদের মনের দিকে তাকিয়ে এত ঝামেলায় যেতে চান না তাই তারা বলেন যে শবে বরাতের নামাজ পড়ুন।  এভাবে বা ওভাবে। আর মানুষজনও খুশি ননে শবে বরাতের নামাজ আদায় করে যাচ্ছেন। এক কথায় শবে বরাতের নামাজ মানে হচ্ছে নফল নামাজ।আর নফল নামাজ যেমন আপনি আল্লাহ তায়ালার জন্যই পড়বেন শবে বরাতের নাম দিয়েও আল্লাহ তায়ালার জন্যই পড়বেন। তাই এসব নিয়ে তর্কে না জড়িয়ে বেশি বেশি নফল নামাজ পুড়ুন।  নামাজ পড়তে আর শক্তি না পেলে কুরআন তিলাওয়াত করুন। কেননা ফরজ নামজের পর আল্লাহ তায়ালার নিকট সর্বোত্তম ইবাদত হচ্ছে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করা।  তাই বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করুন।



  • আরো পড়ুন

  • শবে বিরাতের নামাজ কয় রাকাত করে পড়তে হয়


আগেই বলেছি শবে বরাতের নামাজ হচ্ছে নফল নামাজ। সুতরাং এই নামাজ আপনি দুই রাকাত করে পড়াই উত্তম। কারণ আমরা নফল নামাজ সাধারণত দুই রাকাত করে পড়ি। 




একটি বিষয় মনে রাখবেন, নফল নামাজ পড়তে গিয়ে যেন আপনি ফজরের ফরজ নামাজ ত্যাগ না করে ফেলেন। এশার নামাজ পড়ে আপনি বিতির নামাজ রেখে নফল নামাজ পড়বেন। তাই বিতির নামাজ যেন ছোটে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখবেন।  কেননা বিতির নামাজ হচ্ছে ওয়াজিব। বিতির নামাজ ছেড়ে দিলে আপনার শাস্তি হবে কিন্তু শবে বরাতের নামাজ পড়তে না পারলে আপনাকে শাস্তি দেয়া হবেনা। তাই ফরজের প্রতি যেন গুরুত্ব কমে না যায় সেই দিকে খেয়াল রাখুন। 

কোন মন্তব্য নেই

enot-poloskun থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.