গর্ভধারণের লক্ষণ সমূহ: গর্ভকালীন সময়ে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন কি কি হয়ে থাকে
গর্ভধারণের লক্ষণ সমূহ: গর্ভকালীন সময়ে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন কি কি হয়ে থাকে
মা হতে কে বা না চায়? গর্ভধারণ নারীদের জন্য অনেক আনন্দের ব্যাপার। নিজের দেহের মধ্যে আরেকটি প্রাণ এর আগমন ঘটছে এটি নিঃসন্দেহে ভাল লাগার মত একটা বিষয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে নারীরা বুঝতে পারেন না তিনি গর্ভবতী কিনা।গর্ভধারণের বিভিন্ন লক্ষণ রয়েছে,যা থেকে নারীরা সহজেই বুঝতে পারে সে গর্ভবতী কিনা।
নিচে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ-★মাসিক বন্ধ হওয়া
গর্ভধারণের প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গ হল মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া।বিবাহিতা নারীদের হঠাৎ মাসিক বন্ধ হয়ে গেলে প্রথমেই যেটা মাথায় আসে তা হচ্ছে গর্ভধারণ। তবে আরও অনেক কারণেও মাসিক বন্ধ হতে পারে। যেমনঃ-
*বাচ্চাকে দুধ পান করানো
*মেনোপজ হলে
*জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করলে
*নির্দিষ্ট কিছু ঔষধ ব্যবহার করলে।
*অত্যাধিক কম ওজন
*অত্যাধিক মানসিক চাপ
*অতিরিক্ত শ্রম
*হরমোনের ভারসাম্যহীনতা;যেমন-পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম,পিটুইটারি টিউমার,থাইরয়েড সমস্যা ইত্যাদি।
*প্রজনন অঙ্গের গঠনগত সমস্যা প্রভৃতি।
★মাসিক বন্ধ হওয়া ছাড়াও আরও যেসকল লক্ষণ দেখা যায় তা হলো-গা গোলানো,বমি এবং বমিভাব,মাথাঘোরা।
★বার বার প্রস্রাবের চাপ লাগা।
★স্তন ভারী লাগা,এবং ব্যথা হওয়া।
★যে কোন খাবারে অরুচি।
★পরবর্তীতে জরায়ু বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হওয়ার ফলে তলপেট ফুলতে থাকে যা বাইরে থেকে লক্ষ্য করা যায়।
★পেটের ঠিক মাঝে নাভী বরাবর লম্বালম্বি দাগ দেখা যায়।
***এসব ছাড়াও গর্ভধারণের সময়বৃদ্ধির সাথে সাথে আরও অনেক শারিরীক লক্ষণ দেখা যায়।যে নারী প্রথমবারের মত মা হতে যাচ্ছে তাদের মধ্যে সাধারণত বেশি দেখা যায়।
★নিচে গর্ভকালীন শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন গুলি তুলে ধরা হলোঃ-
ডিম্বাণু নিষিক্ত হওয়ার পর মায়ের দেহে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোনের আধিক্যের কারনে নানাবিধ শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন দেখা দেয়।একজন নারী যখন প্রথমবারের মত গর্ভধারণ করে তখন হঠাৎ এই পরিবর্তনের ফলে তিনি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ও অস্বস্তিবোধ করেন।কিন্তু মা ও শিশু উভয়ের সুস্বাস্থ্যের জন্য এ সময় মাকে যথেষ্ট পরিচর্যা করা প্রয়োজন যেন তিনি এই পরিবর্তনকে সাদরে গ্রহন করতে পারেন। গর্ভাবস্থায় যে দৈহিক পরিবর্তন গুলো দেখা যায় তার মধ্যে অন্যতম হলঃ-
★বমি বা বমিভাব
সাধারণত গর্ভের প্রথম তিন মাস এ সমস্যা দেখা যায়।এ সময় অল্প অল্প করে বারবার খাবার খেতে হবে।সকালে ঘুম থেকে উঠে শুকনো টোস্টজাতীয় বিস্কুট বা অন্যান্য খাবার খাওয়া যেতে পারে।তৈলাক্ত খাবার পরিহার করলে উপকার পাওয়া যায়। কিন্তু বমি অনেক বেশি হলে এবং মা কিছুই খেতে না পারলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
★বুক জ্বালা
গর্ভাবস্থায় হরমোনের প্রভাবে এসিডিটি বেড়ে যায়।গর্ভাবস্থায় এসিডিটির জন্য বুক জ্বালা করতে পারে।এ সময় বেশি মসলাযুক্ত খাবার, ভাজাপোড়া বা তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।খাওয়ার পরপরই বিছানায় শোয়া যাবেনা।প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
★কোষ্ঠকাঠিন্য
এটি গর্ভকালীন একটি প্রধান সমস্যা। এর জন্য প্রচুর পানি পান করতে হবে।এবং আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে।প্রচুর শাকসবজি খেতে হবে।
★পায়ে পানি আসা
এটিও স্বাভাবিক। অনেক্ষন ধরে দাঁড়িয়ে বা বসে থাকলে এটি হতে পারে।তবে শোয়ার সময় পায়ের নিচে বালিশ দিলে আরাম পাওয়া যাবে।
★স্তনে ব্যথা বা ভারী বোধ হওয়া
গর্ভকালীন হরমোনের প্রভাবে এ সমস্যা দেখা যেতে পারে।এতে চিন্তার কিছুই নেই।
★জরায়ুর আকার বৃদ্ধি
গর্ভের শিশুর দৈহিক বৃদ্ধির সাথে সাথে জরায়ু বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হতে থাকে যার প্রেক্ষিতে তলপেট ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।পেটের ত্বকে টান পড়ায় ত্বকে সাদা দাগ পড়ে।তাছাড়া জরায়ুর চাপে রক্তপ্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে।তাই এ ক্ষেত্রে শোয়ার সময় বাম কাত হয়ে শোয়া উত্তম।
★ওজন বৃদ্ধি
এ সময় ওজন বৃদ্ধি অতিসাধারণ ঘটনা।
এতে ভয়ের কিছু নেই।
★গর্ভাবস্থায় মানসিক পরিবর্তন
এ সময় নানা ধরনের মানসিক পরিবর্তন দেখা যায়।মা অনেক সময় গর্ভস্থ শিশুকে নিয়ে চিন্তিত থাকেন। সাধারণত প্রথমবার মা হওয়ার ক্ষেত্রে মানসিক পরিবর্তন বেশি পরিলক্ষিত হয়।
*এ সময় মেজাজ খিটখিটে থাকে
*ঘুম ঠিকমতো হয় না
*কোন কিছু ভালো লাগেনা
*বিষন্নতা দেখা যেতে পারে।অনেক সময় গর্ভপরবর্তী সময়েও এ বিষাদ দেখা যেতে পারে।
প্রতিকার
মাকে যথাসম্ভব পারিপার্শ্বিক চাপ থেকে মুক্ত রাখতে হবে। পারিবারিকভাবে মা এর উপর সহনশীল হতে হবে।
কোন মন্তব্য নেই