Home
/
বাংলা সাহিত্য
/
Education
/
ট্রাজেডি কাকে বলে ট্রাজেডির বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি ট্রাজেডি সম্পর্কে বিস্তারিত
ট্রাজেডি কাকে বলে ট্রাজেডির বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি ট্রাজেডি সম্পর্কে বিস্তারিত
ট্রাজেডি কাকে বলে ট্রাজেডির বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি ট্রাজেডি সম্পর্কে বিস্তারিত
ট্রাজেডির উদ্ভব কীভাবে ও কোথায়
ট্রাজেডি শব্দটির প্রয়োগ আরিয়ন নামক এক কবির লেখায় প্রথম পাওয়া যায়।তিনি ছিলেন ডিথির্যাম্ব বা দিথুরাম্ব (Dithyramb) গীতির রচয়িতা।ট্রাজেডি শব্দটি তাঁর ভাষা প্রয়োগ থেকে গৃহীত হলেও পরবর্তীতে ট্রাজেডির গঠন সম্পর্কে যে সব লক্ষণ স্থিরীকৃত হয়েছে-তা তার রচনায় ছিল না।সুতরাং এখন আর সেই লেখাগুলিকে ট্রাজেডি বলা যাবেনা।আরিয়ন এর কালে এক ধরনের ডিথির্যাম্ব গীতিকেই ট্রাজেডি বলা হত।
ট্রাজেডি শব্দটির অর্থ 'ছাগ-সংগীত' এবং শব্দটির উৎস গ্রিক শব্দ 'ট্রাগোডিয়া'(Tragoedia) ।এই সম্মেলক গীতি গাওয়া হতো দেবতার উৎসবে।সেই উৎসবে বলি দেওয়া হতো ছাগল।গ্রিক সংস্কৃতিতে ছাগল পবিত্র প্রাণী বলে স্বীকৃত।আবার কারও কারও মতে দেবতা ডায়োনিসাস এর পূজা উপলক্ষেই মূলত এই সংগীতমুখর শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হতো।ডায়োনিসাস ছিলেন শস্য,সুরার দেবতা। শস্যের উৎসবে সাধারণ মানুষ নৃত্যগীতসহ শোভাযাত্রা করে দেবতার মন্দিরে যেত। এই ডায়োনিসাসের অনুচর ছিলো সাতুর নামক একদল প্রাণী।তাদের মাথা ও শরীরের ঊর্ব্ধাঙ্গ মানুষের মতো,কিন্তু নিম্নাঙ্গ ছাগলের মতো এবং খুরসহ চারটি পা আছে।এরা আমোদপ্রিয়,সুরাপ্রিয়,ভীরু স্বভাব এবং কামুক।যে ব্যক্তিরা শোভাযাত্রা করে গান করতেন তাঁদের কেউ কেউ সাতুর এর রূপসজ্জা গ্রহন করতেন। এখান থেকেই 'সাতুর'এর গান বা 'ছাগসংগীত' শব্দটির উৎপত্তি।
এরিস্টটলের কাব্যতত্ত্ব গ্রন্থটি ছাব্বিশটি পরিচ্ছেদে সম্পূর্ণ। ষষ্ঠ থেকে ঊঊনবিংশ পর্যন্ত চৌদ্দটি পরিচ্ছেদে তিনি ট্রাজেডির বিভিন্ন লক্ষণ ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করেছেন।কেউ কেউ বলেছেন,মনে হয় তিনি যেন ট্রাজেডি বিষয়টি নিয়ে লিখতেই কলম ধরেছেন।এরিস্টটল কাব্যতত্ত্ব গ্রন্থের ষষ্ঠ পরিচ্ছেদে ট্রাজেডি সম্পর্কে বলেছেন-
Tragedy,then, is an imitation of an action that is serious and complete in itself,having certain magnitude, not in a narrative form but in action, with pleasurable accessories,arousing pity and fear,and herewith it accomlishes to chateris,[Bywater,Aristotle on the Art of poetry,Oxford University Press,1909]
শিশিরকুমার দাশ এর অনুবাদ থেকে জানা যায়ঃ-
ট্রাজেডি হলো একটি গম্ভীর, সসম্পূর্ণ ও বিশেষ আয়তনবিশিষ্ট ক্রিয়ার অনুকরণ, ভাষার সৌন্দর্যে তার প্রতিটি অঙ্গ স্বতন্ত্র, এই ক্রিয়াটির প্রকাশরীতি বর্ণনাত্মক নয়,নাটকীয় আর এই ক্রিয়া ভীতি ও করুণার উদ্রেক করে এবং তার মধ্য দিয়ে অনুরূপ অনুভূতিগুলোর পরিশুদ্ধি ঘটায়।
ট্রাজেডির বৈশিষ্ট্য গুলি কি কি?
ট্রাজেডির এই সংজ্ঞাটিতে এরিস্টটল যা বলেছেন সেগুলি সূত্রাকারে সাজিয়ে এর স্বরূপ জানা যেতে পারে।
ক.ট্রাজেডি সিরিয়াস বা গুরুগম্ভীর ঘটনার অনুকরণ হবে।গুরুগম্ভীর বলতে বোঝায় জীবনের উপরিতলের কোনো তরল,লঘু, কৌতুকজনক ঘটনা ট্রাজেডির বিষয়বস্তু হবেনা।মানব অস্তিত্বের গভীর কোন সংঘাত যা বহির্জীবনে ঘটতে পারে অথবা অন্তর্জীবনে ঔচিত্যবোধের ও নৈতিকতার সংঘর্ষ, ভাগ্যের প্রতিকূলতায় মানুষের শোকাবহ পরিণাম এসব নিয়েই ট্রাজেডি নির্মিত হবে।
খ.ট্রাজেডির ঘটনা হবে স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং নির্দিষ্ট আয়তন বিশিষ্ট। নির্দিষ্ট আয়তন বলতে এরিস্টটল বুঝিয়েছেন যে,ট্রাজেডির ঘটনা-বিস্তার এত বড়ো হবেনা যে তা দর্শক-পাঠকের স্মৃতিতে বিধৃত থাকতে পারবেনা। আবার তা এত ছোট হবে না যে, যথাযোগ্য বিশ্লেষনে ট্রাজেডির দ্বন্দ্ব পরিস্ফুট হবার অবকাশ পেল না।
গ.ট্রাজেডির রচনারীতি বিবৃতিমূলক নয়,এই রচনারীতি ক্রিয়াত্মক বা নাটকীয়।ট্রাজেডি এবং যেকোন নাটক নির্মাণের রীতি নাটক সৃষ্টির ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।
ঘ.এরিস্টটল বলেছেন ট্রাজেডিতে থাকবে ভাষার সৌন্দর্য এবং প্রতিটি অঙ্গ অনুভূত হবে স্বতন্ত্র ভাবে।
ঙ.ট্রাজেডির পরিণামে দর্শক এবং পাঠকের চিত্তে জাগবে করুণা এবং ভয়।ট্রাজিক কাহিনির অন্যতম আবশ্যিক লক্ষনই হলো এই করুণা ও ভয় উদ্রেক করার সামর্থ্য।
চ.ট্রাজেডির সং জ্ঞায় এরিস্টটল 'ক্যাথারসিস'শব্দটির উল্লেখ করেছেন।কিন্তু কাব্যতত্ত্ব গ্রন্থে কোথাও এই শব্দটির ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।'ক্যাথারসিস' শব্দটিকে বাংলায় অনেকে ভাবমোক্ষণ বলে থাকেন।
ট্রাজেডি সম্পর্কে আরও জানতে এখানে ক্লিক করুণ
সুতরাং পরিশেষে বলা যায় যে,রঙ্গমঞ্চে নায়ক বা নায়িকার গতিমান জীবন কাহিনির দৃশ্য পরম্পরা উপস্থিত করতে যে নাটক দর্শকের হৃদয় ভীতি ও করুণা প্রশমন করে মনে করুণ রসের আনন্দ সৃষ্টি করে তাই ট্রাজেডি,ট্রাজেডি মানব জীবনের গভীরতম প্রদেশ পর্যন্ত আলোড়িত করে।
কোন মন্তব্য নেই