বিপ্রতীপতা ও উদঘাটন কাকে বলে সংক্ষেপে আলোচনা কর

বিপ্রতীপতা ও উদঘাটন কাকে বলে সংক্ষেপে আলোচনা কর




বিপ্রতীপতা ও উদঘাটন কাকে বলে


ট্রাজেডির কাহিনীতে, এবং বৃহত্তর অর্থে যে কোন নাটকের কাহিনীতে দুটি লক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।সেটি হল বিপ্রতীপতা এবং উদঘাটন।

বিপ্রতীপতা কাকে বলে


বিপ্রতীপতা শব্দটি গ্রিক পরিভাষা হলো 'পেরিপেতি'(Peripetia) যার অর্থ পরিস্থিতি বিপর্যয়। সহজভাবে বিষয়টিকে 'কাহিনীর ভিন্নমুখী গতি' বলা যেতে পারে।এরিস্টোটল তার রেটোরিব গ্রন্থে বলেছেন-আকস্মিকভাবে ভাগ্যের পরিবর্তন হল পেরিপেতি।ট্রাজেডির কাহিনীতে দেখা যায় কাহিনী একমুখে প্রবাহিত হতে হতে কোন ঘটনার ফলে প্রবাহিত হয়। সেখানে সুখের পরিস্থিতি থেকে ঘটনা-ধারা দুর্ভাগ্যের অভিমুখে পরিবর্তিত গতিতে অগ্রসর হবে। একেই বলা হয় কাহিনির বিপ্রতীপতা।

ট্রাজেডি তে এই বিপ্রতীপতাই ট্রাজিক পরিণতির প্রথম সূচক।বিপ্রতীপতা ছাড়ার ট্রাজেডি ঘটা সম্ভব নয়। আপাতদৃষ্টিতে বিপ্রতীপতার মূলেএকটি আকস্মিক ঘটনা থাকলেও ট্র্যাজেডির অনুসরণে দেখা যায় যে, সেখানে সেই পরিবর্তন বা বিপ্রতীপতার বীজ  ছিল অনিবার্য এবং সম্ভাব্য।

উদাহরণ হিসেবে আমরা বলতে পারি যে, রাজা ইডিপাস নাটকের
যখন সিংহাসনে সু-প্রতিষ্ঠিত ইডিপাস দেশে মড়ক লাগলো কেন তার সন্ধান সূত্রে রাজার হত্যাকারী কে এই অনুসন্ধানে বের হলেন তিনি তখন জানতে পারেন তিনি হচ্ছেন হত্যাকারী, আর তখনই কাহিনীর মধ্যে  বিপরীত গতি সূচিত হয়।

উদঘাটন কাকে বলে 


বাংলায় যাকে আমরা উদঘাটন বলে থাকি,ইংরেজিতে তাকে বলা হয়েছে 'ডিসকভারি' তা হলো অজ্ঞাত অবস্থা থেকে জ্ঞাত অবস্থায় উপনীত হওয়া। ট্রাজেডির প্লট্র প্রায়ই দেখা যায়, কোন একটি তথ্য গোপন আছে। সে গোপন তথ্যটি এতই গুরুত্বপূর্ণ যে প্লটের গতিমুখ নির্ভর করছে তার ওপর। একসময় গোপন তথ্য উদঘাটিত হয় উদঘাটনের ফলে সুনিশ্চিত হয়ে যায় ট্রাজেডির পরিণাম। অবশ্য সব ট্রাজেডিতেই যে উদঘাটন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয় এমন নয়।

উদাহরণ হিসেবে আমরা বলতে পারি যে, রাজা ইডিপাস নাটকের উদঘাটনের সুনিপুণ বিন্যাস আছে।কে রাজার হত্যাকারী এই গোপন তথ্যটি যখন সকলের সামনে চলে আসে তখন থেকেই ইডিপাসের দুর্ভাগ্যের বৃত্ত সম্পূর্ণ হয়।

এরিস্টটল কাব্যতত্ত্ব গ্রন্থের একাদশ অধ্যায়ে বিপ্রতীপতা এবং উদঘাটন সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেছেন। সেখানে তিনি দেখিয়েছেন যে বিভিন্ন ধরনের উদঘাটন থাকতে পারে বিষয়টি তিনি যথেষ্ট বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন কাব্যতত্ত্ব গ্রন্থের ষোড়শ অধ্যায়ে।এই অধ্যায়টির নামই হলো 'উদঘাটনের শেণিবিভাগ'।তিনি বলেছেন-

প্রথমত, 
বাইরের কোন চিহ্নের সাহায্যে উদঘাটন হতে পারে। যেমন চিঠি, কোন অলংকার- যেখানে কিছু খোদিত আছে, দেহের কোন চিহ্ন ইত্যাদি। এ জাতীয় উদঘাটন বিশ্বসাহিত্যের সর্বত্র আখ্যানমূলক সাহিত্যে দেখতে পাওয়া যায়।

দ্বিতীয়ত,
কোন চরিত্র নিজেই নিজের পরিচয় কথাসূত্র উদঘাটিত করতে পারে, যে পরিচয় আগে জানা ছিল না।ওরিসটিস  নাটকে মন্দিরের পূজারিণী ইলেক্টা দেবীর কাছে উৎসর্গের জন্য নির্দিষ্ট যুবকের সঙ্গে সংলাপ সূত্রে জানতে পারে যে ওরিসটিস তারই ভাই।

তৃতীয়ত,
স্মৃতির সাহায্যে উদঘাটন। একটা ছবি দেখে বা একটি গান শুনে স্মৃতি জাগ্রত হতে পারে। এরিস্টটল এ প্রসঙ্গে কুপ্রিয়া নামের একটি নাটকের উল্লেখ করেছেন। স্মৃতি রোমন্থন সূত্রে সত্য উদঘাটনের বিবরণ আছে রাজা ইডিপাস নাটকে। সেখানে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে থিবিস রাজপরিবারের প্রাচীন ভৃত্য এবং মেষপালকের স্মৃতি রোমন্থন সূত্রে সত্য উদঘাটন হয়েছে।


উদঘাটন সম্পর্কে এরিস্টটল বলেছেনঃ

"উদঘাটন তখনই খুব ফলপ্রসূ হয় যখন তা বিপ্রতীপতা সঙ্গে সঙ্গে ঘটে"।

(একাদশ পরিচ্ছেদ) সে সঙ্গে এরিস্টটল বলেছেন- 
"কাহিনী বিন্যাস এর মধ্য দিয়ে যে উদঘাটন ঘটে সেই উদঘাটন শ্রেষ্ঠ। কারণ " 
ঐ রকম উদ্ঘাটন এবং ভাগ্যের পরিবর্তন করুণা কিংবা ভয় জাগিয়ে তোলে। আর আমাদের বিবেচনায় এরকম ঘটনার বর্ণনাই ট্রাজেডির লক্ষ্য। তাছাড়া (উদ্ঘাটনের ফলেই) কাহিনির সমাপ্তি সম্ভব সুখে কিংবা দুঃখে। (একাদশ পরিচ্ছেদ)

সুতরাং বলা যায় যে, বিপ্রতীপতা ও উদঘাটন শুধু ট্রাজিক নাটকে নয় সকল নাটকে গুরুত্বপূর্ণ।

কোন মন্তব্য নেই

enot-poloskun থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.