ফররুখ আহমদের 'সাত সাগরের মাঝি' কাব্যের শিল্পমূল্য আলোচনা কর
ফররুখ আহমদের 'সাত সাগরের মাঝি' কাব্যের শিল্পমূল্য আলোনা কর
বাংলা সাহিত্য |
উপস্থাপনাঃ
ফররুখ আহমদ (১৯১৮-৭৪) বাংলা সাহিত্যের একজন মৌলিক প্রতিভাধর শক্তিমান কবি। বিংশ শতাব্দীর চল্লিশের দশকে কাব্য-ক্ষেত্রে তার বর্ণাঢ্য আবির্ভাব। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'সাত সাগরের মাঝি' প্রকাশিত হয় ১৯৪৪ সালে। চল্লিশের দশকে যেসব প্রতিভাবান কবির আবির্ভাব ঘটে তিনি তাদের মধ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয় ও আলোচিত কবি হিসেবে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যে রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয় তারই ফল হল ১৩৫০ সনের (ইংরেজি ১৯৪৩) মন্বন্তর। এ মন্বন্তরে বাংলার লক্ষ লক্ষ মানুষ অনাহারে মৃত্যু বরণ করেন। ফররুখ আহমদ সে দুর্ভিক্ষের মর্মন্তুদ দৃশ্য স্বচক্ষে অবলোকন করেছেন এবং সেই বিষয়ে অনেক প্রাণ স্পর্শী কবিতা রচনা করেছেন । ওই সময় তাঁর এ জাতীয় কবিতা সকলের প্রশংসার কারন হয়।
কারণ, দুর্ভিক্ষ নিয়ে যারা কবিতা লিখেছেন তাদের মধ্যে ফররুখ আহমদের কবিতা ছিল অনেকটা ভিন্ন প্রকৃতির, স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ও গভীর আবেদন সৃষ্টিকারী। তার বিখ্যাত লাশ কবিতাকে এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়।
ফররুখ আহমদ তার সমকাল ও জীবন বাস্তবতা সম্পর্কে অতিশয় সচেতন ছিলেন। তাঁর বিভিন্ন লেখায় এর সুস্পষ্ট প্রতিফলন ঘটেছে। দুর্ভিক্ষ, জ্বরা- মৃত্যু, নদী ভাঙ্গন, মানুষের বিচিত্র জীবন সংগ্রাম, নবজাগরণ,স্বাধীনতা স্পৃহা ইত্যাদি সবকিছুই গভীর মানবিক সংবেদনায় তিনি তাঁর কাব্যে ফুটিয়ে তুলেছেন। তাই তাঁর কাব্য হয়েছে অত্যন্ত আবেদনশীল। মানুষের জীবন স্বপ্ন রূপায়নের তিনি ছিলেন এক অসাধারণ কবি। তাই জীবন সংগ্রামের হতোদ্যম, স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় ব্যথাতুর মানুষ তার কাব্য কবিতায় খুঁজে পেয়েছে আশা, আনন্দ ও নির্ভরতা। সংবেদনশীল মানুষের কাছে তাই তাঁর আবেদন অনিঃশেষ।
ফররুখ আহমদকে অনেকে ইসলামী রেনেসাঁ ও মুসলিম ঐতিহ্যের কবি বলে অভিহিত করে থাকেন। তাকে ইসলামী রেনেসাঁর কবি বলা হয় এজন্য যে, তিনি তাঁর কবিতার মাধ্যমে ইসলামী পুনর্জাগরণ স্পৃহা জাগ্রত করেছেন। মুসলিম ঐতিহ্যের কবিও বলা হয় এজন্য যে, তাঁর কাব্যে মুসলিম ঐতিহ্য চেতনা বিবৃত হয়েছে।।ফররুখ আহমদের কাব্যের ভাব ও বিষয় বহু বিচিত্র। সেখানে ইসলামী আদর্শ, মুসলিম ঐতিহ্য এবং আরব্য উপন্যাসের কথা যেমন রয়েছে, তেমনি বাংলাদেশের প্রকৃতি, ফুল পাখি, পাহাড় নদী, সাধারণ মানুষের জীবন- বৈচিত্র ও সুখ দুঃখ, হাসি কান্না ও জীবন সংগ্রামের বিচিত্র বিষয় ও অপরূপ কাব্য ভাষায় আভরণ মন্ডিত হয়ে উঠেছে।।
'সাত সাগরের মাঝি' ফররুখ আহমদের প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ। এটি তাঁর সর্বাধিক আলোচিত ও সর্বাধিক জনপ্রিয় গ্রন্থ।এই গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত কবিতাগুলোর রচনাকাল ১৯৪৩-১৯৪৪ সাল।
বাংলা সাহিত্যের একজন প্রধান কবি হিসাবে অসাধারণ কাব্য-নৈপুণ্যে, স্বতন্ত্র কাব্য-ভাষা নির্মাণে,বলিষ্ঠ মানবিক সংবেদনা সৃষ্টিতে এবং সর্বোপরি নবজাগরণের প্রেরণা সৃষ্টিতে ফররুখ আহমদ এর কৃতিত্ব সর্বজনস্বীকৃত।
'সাত সাগরের মাঝি' তে যেমন আছে স্বপ্ন,সৌন্দর্যবোধ ও উজ্জীবনের প্রেরণা, তেমনি আছে বন্দিদশার জন্য হাহাকার ও আহাজারী।আছে আত্মধিক্কার এবং নির্যাতিত-নিপীড়িত ও দুর্ভিক্ষ পীড়িত ক্ষুধাতুর মানুষের জন্য গভীর মমতাবোধ।ইসলামী মানবতাবাদী আদর্শের কবি মানুষের মুক্তির জন্য ইঙ্গিত করেছেন হেরাজ রাজতোরণ এর দিকে সাত সাগরের মাঝি কে আহবান জানিয়েছেন সেই রশ্মি ধরে সফরের পর সফরে এগিয়ে যাওয়ার জন্য। নারঙ্গী বনে কাঁপছে সবুজ পাতার ভেতর দিয়ে জাতির আশা ও কামনা সেদিন তাদের যে সুরের রূপ পেয়েছিল এবং যে প্রাণচাঞ্চল্য সঞ্চারমান হয়ে উঠেছিল 'সাত সাগরের মাঝি' তে সে ছবিই বিবৃত হয়েছে। তাই 'সাত সাগরের মাঝি' কবি এককথায় আমাদের জাতীয় রেনেসাঁর সার্থক রূপকার। তিনি ঐতিহ্যের পাটাতনে আদর্শের পাল উড়িয়ে সিন্দবাদ নাবিক সেজেছেন। বর্তমানে ফিরে এসে আবার সমুদ্র সম্ভোগের সেই সান্তিয়াগো হয়েছেন।
ফররুখ আহমদ একজন শিল্প সচেতন কবি। রং, বর্ণ ও শব্দের অপরূপ ব্যবহারে তিনি অসাধারণ কৃতিত্ব প্রদর্শন করেছেন। আধুনিক কাব্য রীতি, অলংকার-প্রতীক- উপমা-রূপকল্প ইত্যাদি ব্যবহারে তিনি স্বাতন্ত্রিক মহিমায় উজ্জ্বল। নিজে ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র হওয়ার সুবাদে আধুনিক কাব্য কলা সম্পর্কে তাঁর যথেষ্ট জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা ছিল। তাঁর সে অভিজ্ঞতা ও অভিজ্ঞান দিয়ে তিনি তাঁর কাব্যের অপরূপ সৌন্দর্যময় সৌধ নির্মাণে অসাধারণ সাফল্য প্রদর্শন করেছেন।এক্ষেত্রে বাংলা সাহিত্যে আধুনিকতার জনক হিসাবে খ্যাত মাইকেল মধুসূদন দত্তের সাথে তাঁর তুলনা চলে।আরবি, ফারসি শব্দের সুপরিকল্পিত প্রয়োগ ঘটিয়ে স্বাতন্ত্র্য কামী মুসলমান সমাজের সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যের উপযুক্ত বাহনরূপে বাংলা ভাষাকে গড়ে তোলা যে প্রচেষ্টা ফররুখ আহমদ আপন কাব্যে করেছেন সেটি প্রকৃতপক্ষে তারই একক কৃতিত্ব। যেমনঃ
তাছাড়া বিশুদ্ধ তৎসম ও তদ্ভব শব্দের সমবায়ে গঠিত অপরূপ ধ্বনি মাধুর্য ও কাব্য শ্রীমণ্ডিত ভাষা ব্যবহারেও তিনি নৈপুণ্য দেখিয়েছেন। যেমনঃ
কবি 'সাত সাগরের মাঝি' কাব্যের মধ্যে বিভিন্ন শব্দালঙ্কার ও অর্থালঙ্কার এর ব্যবহার দেখিয়েছেন। তিনি উপমা, রূপক, উৎপ্রেক্ষা, চিত্রকল্প, প্রতীক নির্মাণেও নতুনতর সংযোজন করেছেন। যেমন-
উৎপ্রেক্ষাঃ
উপমাঃ
চিত্রকল্পঃ
প্রতীকঃ
'সাত সাগরের মাঝি' বিরল কয়েকটি বাংলা প্রতীকী কাব্যগ্রন্থের অন্যতম।সমুদ্র,জাহাজ,নাবিক,সিন্ দবাদ, মাঝি,পাখি (ডাহুক বা ঈগল),শাহরিয়ার এই সব প্রতীকে ফররুখ আহমদ এক নীল উত্তাল জাগরণের গায়ক।তিনি সমুদ্র জাহাজ নাবিকের এমন এক স্বতন্ত্র প্রতীকী মহিমা দান করেন,যেখানে সমুদ্র চিত্ত ও চিত্রকল্পে যেমন বাস্তব হয়ে উঠে তেমনি এক কল জগতকে মেলে ধরে।যেমনঃ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যে রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয় তারই ফল হল ১৩৫০ সনের (ইংরেজি ১৯৪৩) মন্বন্তর। এ মন্বন্তরে বাংলার লক্ষ লক্ষ মানুষ অনাহারে মৃত্যু বরণ করেন। ফররুখ আহমদ সে দুর্ভিক্ষের মর্মন্তুদ দৃশ্য স্বচক্ষে অবলোকন করেছেন এবং সেই বিষয়ে অনেক প্রাণ স্পর্শী কবিতা রচনা করেছেন । ওই সময় তাঁর এ জাতীয় কবিতা সকলের প্রশংসার কারন হয়।
কারণ, দুর্ভিক্ষ নিয়ে যারা কবিতা লিখেছেন তাদের মধ্যে ফররুখ আহমদের কবিতা ছিল অনেকটা ভিন্ন প্রকৃতির, স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ও গভীর আবেদন সৃষ্টিকারী। তার বিখ্যাত লাশ কবিতাকে এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়।
ফররুখ আহমদ তার সমকাল ও জীবন বাস্তবতা সম্পর্কে অতিশয় সচেতন ছিলেন। তাঁর বিভিন্ন লেখায় এর সুস্পষ্ট প্রতিফলন ঘটেছে। দুর্ভিক্ষ, জ্বরা- মৃত্যু, নদী ভাঙ্গন, মানুষের বিচিত্র জীবন সংগ্রাম, নবজাগরণ,স্বাধীনতা স্পৃহা ইত্যাদি সবকিছুই গভীর মানবিক সংবেদনায় তিনি তাঁর কাব্যে ফুটিয়ে তুলেছেন। তাই তাঁর কাব্য হয়েছে অত্যন্ত আবেদনশীল। মানুষের জীবন স্বপ্ন রূপায়নের তিনি ছিলেন এক অসাধারণ কবি। তাই জীবন সংগ্রামের হতোদ্যম, স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় ব্যথাতুর মানুষ তার কাব্য কবিতায় খুঁজে পেয়েছে আশা, আনন্দ ও নির্ভরতা। সংবেদনশীল মানুষের কাছে তাই তাঁর আবেদন অনিঃশেষ।
ফররুখ আহমদকে অনেকে ইসলামী রেনেসাঁ ও মুসলিম ঐতিহ্যের কবি বলে অভিহিত করে থাকেন। তাকে ইসলামী রেনেসাঁর কবি বলা হয় এজন্য যে, তিনি তাঁর কবিতার মাধ্যমে ইসলামী পুনর্জাগরণ স্পৃহা জাগ্রত করেছেন। মুসলিম ঐতিহ্যের কবিও বলা হয় এজন্য যে, তাঁর কাব্যে মুসলিম ঐতিহ্য চেতনা বিবৃত হয়েছে।।ফররুখ আহমদের কাব্যের ভাব ও বিষয় বহু বিচিত্র। সেখানে ইসলামী আদর্শ, মুসলিম ঐতিহ্য এবং আরব্য উপন্যাসের কথা যেমন রয়েছে, তেমনি বাংলাদেশের প্রকৃতি, ফুল পাখি, পাহাড় নদী, সাধারণ মানুষের জীবন- বৈচিত্র ও সুখ দুঃখ, হাসি কান্না ও জীবন সংগ্রামের বিচিত্র বিষয় ও অপরূপ কাব্য ভাষায় আভরণ মন্ডিত হয়ে উঠেছে।।
'সাত সাগরের মাঝি' ফররুখ আহমদের প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ। এটি তাঁর সর্বাধিক আলোচিত ও সর্বাধিক জনপ্রিয় গ্রন্থ।এই গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত কবিতাগুলোর রচনাকাল ১৯৪৩-১৯৪৪ সাল।
বাংলা সাহিত্যের একজন প্রধান কবি হিসাবে অসাধারণ কাব্য-নৈপুণ্যে, স্বতন্ত্র কাব্য-ভাষা নির্মাণে,বলিষ্ঠ মানবিক সংবেদনা সৃষ্টিতে এবং সর্বোপরি নবজাগরণের প্রেরণা সৃষ্টিতে ফররুখ আহমদ এর কৃতিত্ব সর্বজনস্বীকৃত।
'সাত সাগরের মাঝি' তে যেমন আছে স্বপ্ন,সৌন্দর্যবোধ ও উজ্জীবনের প্রেরণা, তেমনি আছে বন্দিদশার জন্য হাহাকার ও আহাজারী।আছে আত্মধিক্কার এবং নির্যাতিত-নিপীড়িত ও দুর্ভিক্ষ পীড়িত ক্ষুধাতুর মানুষের জন্য গভীর মমতাবোধ।ইসলামী মানবতাবাদী আদর্শের কবি মানুষের মুক্তির জন্য ইঙ্গিত করেছেন হেরাজ রাজতোরণ এর দিকে সাত সাগরের মাঝি কে আহবান জানিয়েছেন সেই রশ্মি ধরে সফরের পর সফরে এগিয়ে যাওয়ার জন্য। নারঙ্গী বনে কাঁপছে সবুজ পাতার ভেতর দিয়ে জাতির আশা ও কামনা সেদিন তাদের যে সুরের রূপ পেয়েছিল এবং যে প্রাণচাঞ্চল্য সঞ্চারমান হয়ে উঠেছিল 'সাত সাগরের মাঝি' তে সে ছবিই বিবৃত হয়েছে। তাই 'সাত সাগরের মাঝি' কবি এককথায় আমাদের জাতীয় রেনেসাঁর সার্থক রূপকার। তিনি ঐতিহ্যের পাটাতনে আদর্শের পাল উড়িয়ে সিন্দবাদ নাবিক সেজেছেন। বর্তমানে ফিরে এসে আবার সমুদ্র সম্ভোগের সেই সান্তিয়াগো হয়েছেন।
ফররুখ আহমদ একজন শিল্প সচেতন কবি। রং, বর্ণ ও শব্দের অপরূপ ব্যবহারে তিনি অসাধারণ কৃতিত্ব প্রদর্শন করেছেন। আধুনিক কাব্য রীতি, অলংকার-প্রতীক- উপমা-রূপকল্প ইত্যাদি ব্যবহারে তিনি স্বাতন্ত্রিক মহিমায় উজ্জ্বল। নিজে ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র হওয়ার সুবাদে আধুনিক কাব্য কলা সম্পর্কে তাঁর যথেষ্ট জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা ছিল। তাঁর সে অভিজ্ঞতা ও অভিজ্ঞান দিয়ে তিনি তাঁর কাব্যের অপরূপ সৌন্দর্যময় সৌধ নির্মাণে অসাধারণ সাফল্য প্রদর্শন করেছেন।এক্ষেত্রে বাংলা সাহিত্যে আধুনিকতার জনক হিসাবে খ্যাত মাইকেল মধুসূদন দত্তের সাথে তাঁর তুলনা চলে।আরবি, ফারসি শব্দের সুপরিকল্পিত প্রয়োগ ঘটিয়ে স্বাতন্ত্র্য কামী মুসলমান সমাজের সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যের উপযুক্ত বাহনরূপে বাংলা ভাষাকে গড়ে তোলা যে প্রচেষ্টা ফররুখ আহমদ আপন কাব্যে করেছেন সেটি প্রকৃতপক্ষে তারই একক কৃতিত্ব। যেমনঃ
ঘন সন্দল কাফুরের বনে ঘোরে এ দিল বেঁহুশহাতির দাঁতের সাঁজোয়া পরেছে শিলাদৃঢ় আবলুস
ঘন সন্দল কাফুরের বনে ঘোরে এ দিল বেঁহুশ
হাতির দাঁতের সাঁজোয়া পরেছে শিলাদৃঢ় আবলুস
তাছাড়া বিশুদ্ধ তৎসম ও তদ্ভব শব্দের সমবায়ে গঠিত অপরূপ ধ্বনি মাধুর্য ও কাব্য শ্রীমণ্ডিত ভাষা ব্যবহারেও তিনি নৈপুণ্য দেখিয়েছেন। যেমনঃ
ঘোরে উদ্দাম সিন্ধু-ঈগল সমুদ্র নীল ঝড়েতুফানের ছাঁচে ঘূর্ণাবর্তে সুগঠিত তার তনু,পুষ্ট পালকে পিছলিয়া পরে প্রবাল বর্ণধনু।
ঘোরে উদ্দাম সিন্ধু-ঈগল সমুদ্র নীল ঝড়ে
তুফানের ছাঁচে ঘূর্ণাবর্তে সুগঠিত তার তনু,
পুষ্ট পালকে পিছলিয়া পরে প্রবাল বর্ণধনু।
কবি 'সাত সাগরের মাঝি' কাব্যের মধ্যে বিভিন্ন শব্দালঙ্কার ও অর্থালঙ্কার এর ব্যবহার দেখিয়েছেন। তিনি উপমা, রূপক, উৎপ্রেক্ষা, চিত্রকল্প, প্রতীক নির্মাণেও নতুনতর সংযোজন করেছেন। যেমন-
উৎপ্রেক্ষাঃ
ডাকে বাগদাদী খেজুর শাখায় শুক্লা রাতের চাঁদ,মাহগীর বুঝি দজলার বুকে ফেলে জোছনার জালকোমল কুয়াশা বহে যেথা মাটি পেতেছে নূতন ফাঁদঘরে ফেরবার সময় হয়েছে আজ।
ডাকে বাগদাদী খেজুর শাখায় শুক্লা রাতের চাঁদ,
মাহগীর বুঝি দজলার বুকে ফেলে জোছনার জাল
কোমল কুয়াশা বহে যেথা মাটি পেতেছে নূতন ফাঁদ
ঘরে ফেরবার সময় হয়েছে আজ।
উপমাঃ
দেখ আসমানে ফোটে সিতারার কলি,আরশির মত নিটোল পানিতে মুখ দেখে বকাতলী।
দেখ আসমানে ফোটে সিতারার কলি,
আরশির মত নিটোল পানিতে মুখ দেখে বকাতলী।
চিত্রকল্পঃ
জাজিমের বুকে ছড়ানো পাথর দানা।
'সাত সাগরের মাঝি' বিরল কয়েকটি বাংলা প্রতীকী কাব্যগ্রন্থের অন্যতম।সমুদ্র,জাহাজ,নাবিক,সিন্
কেটেছে রঙিন মখমল দিন, নতুন সফর আজ,শুনছি আবার নোনা দরিয়ার ডাক,ভাসে জোরওয়ার মৌজের শিরে সফেদ চাঁদির তাজ,পাহাড়-বুলন্দ ঢেউ বয়ে আনে নোনা দরিয়ার ডাক।
কেটেছে রঙিন মখমল দিন, নতুন সফর আজ,
শুনছি আবার নোনা দরিয়ার ডাক,
ভাসে জোরওয়ার মৌজের শিরে সফেদ চাঁদির তাজ,
পাহাড়-বুলন্দ ঢেউ বয়ে আনে নোনা দরিয়ার ডাক।
'সাত সাগরের মাঝি' কাব্যগ্রন্থে ফররুকজ আহমদ অক্ষরবৃত্ত ও মাত্রাবৃত্ত উভয় ছন্দই ব্যবহার করেছেন।।এ কাব্যের মূল ছন্দ মাত্রাবৃত্ত এবং মুক্তক মাত্রাবৃত্ত ছন্দ। যেমনঃ
অক্ষরবৃত্তঃ
তবু সে জাগাবে সব সঞ্চয়ে নারঙ্গী রক্তিম,
যদিও বাতাসে ঝরছে ধূসর পাতা;
যদিও বাতাসে ঝরছে মৃত্যুর হিম,
এখনো যে তার জ্বলে অফুরান আশা।'
তবু সে জাগাবে সব সঞ্চয়ে নারঙ্গী রক্তিম,
যদিও বাতাসে ঝরছে ধূসর পাতা;
যদিও বাতাসে ঝরছে মৃত্যুর হিম,
এখনো যে তার জ্বলে অফুরান আশা।'
মাত্রাবৃত্তঃ
ভেঙে ফেলো আজ খাকের মমতা আকাশে উঠেছে চাঁদ,
দরিয়ার বুকে দামাল জোয়ার ভাঙছে বালুর বাঁধ,
ছিঁড়ে ফেলে আজ আয়েশি রাতের মখমল-অবসাদ,
নতুন পানিতে হাল খুলে দাও,হে মাঝি সিন্দবাদ।
পরিশেষে বলা যায় যে,সাত সাগরের মাঝি কাব্যে অতীতকে নবমূলে উদ্ভাসিত করে ভবিষ্যতের পথ নির্দেশ দানের প্রয়াসটি লক্ষ্য করা যায়।এর গুরুত্ব ও শিল্পমূল্য অপরিসীম।
কোন মন্তব্য নেই